বনিক বার্তা | মেসবাহুল হক ও আবু তাহের

বৈশ্বিকভাবে জ্বালানির দাম বাড়ায় আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন পর্যায়েও বেড়েছে। এ ব্যয় সামাল দিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকির প্রয়োজন হবে। তবে চাহিদার বিপরীতে এ দুই খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ থাকছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা, যা চাহিদার অর্ধেক।

বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) জন্য উৎপাদন পর্যায়ে ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে এলএনজি আমদানি পর্যায়ে ভর্তুকির প্রয়োজন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে এ দুই খাত মিলিয়ে মোট ৬৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন। তবে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী বাজেটে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে মোট ৩৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হতে পারে। এবার এ দুই খাতে সমান ভর্তুকির পরিকল্পনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এ দুই খাতে আসন্ন বাজেটে ১৭ হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হতে পারে। যেখানে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে বরাদ্দ ছিল ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি রাখা হয় ৯ হাজার কোটি টাকা। যদিও উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা করা হয়। আর গ্যাস খাতে ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, বৈশ্বিকভাবে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। ফলে গ্যাস সরবরাহ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ ভর্তুকির অর্থ বেশি চেয়েছে। তবে দুই খাত মিলিয়ে এবারের বাজেটে ৩৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে সম্মত হয়েছে অর্থ বিভাগ।

বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানিপণ্যের মূল্য ওঠানামা করছে। বাজার নিম্নমুখী হওয়ায় এরই মধ্যে এলএনজি আমদানিতে পেট্রোবাংলার ব্যয় কিছুটা কমেছে। ফলে এলএনজি আমদানিতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল সেসব হিসাব-নিকাশ অর্থবছর শেষে পাল্টে যেতে পারে। একই হিসাব বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে চলতি অর্থবছরে ব্যয় বিবেচনায় নিলে এ দুই খাতে বেশি ভর্তুকি প্রয়োজন হতে পারে। যদিও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ থেকে ভর্তুকির বিষয়টি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মূল্য নির্ধারণের ওপর নির্ভর করছে।

বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে আগামী অর্থবছরে ঠিক কী পরিমাণ ভর্তুকি প্রয়োজন হবে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এটি স্পেসিফিকভাবে এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করার পর বলা যাবে আসলে কী পরিমাণ ভর্তুকির প্রয়োজন।

দেশে বিদ্যুৎ খাতের একক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বিপিডিবি। সংস্থাটি বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে। গ্রাহককে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুতের ক্রয়-বিক্রয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের ঘাটতি থাকে সংস্থাটির, যা ভর্তুকি দিয়ে সমন্বয় করা হয়।

বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে সংস্থাটির ৫৯ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। যার বড় একটি অংশ ব্যয় হবে বিদ্যুৎ বিক্রয় বাবদ ঘাটতি মেটাতে। সংস্থাটির প্রাক্কলন অনুযায়ী, এ অর্থবছরে বাল্ক (পাইকারি) বিদ্যুতে ঘাটতি থাকবে ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকার মতো। এ ঘাটতি পূরণ করতে এরই মধ্যে তাদের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য প্রায় ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।

অন্যদিকে গ্যাস খাতের এলএনজি আমদানিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে জ্বালানি বিভাগের। চলতি অর্থবছরে পেট্রোবাংলার প্রাক্কলন অনুযায়ী, গ্যাস খাত পরিচালনায় সংস্থাটির ৫১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ অর্থের মধ্যে শুধু এলএনজি আমদানিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা। গ্যাস খাতের আর্থির চাপ কমাতে এরই মধ্যে পেট্রোবাংলাসহ বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যদিও এ প্রস্তাবের বিপরীতে ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি।

প্রসঙ্গত, ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর মধ্যে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অর্থ বিভাগ। তাই আসন্ন বাজেটে ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা, যা বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ ও অনুদানের মাধ্যমে পূরণ করবে সরকার।

DISCLAIMER : Views expressed above are the author's own. The contents provided here are only for educational assistance & information purposes only. Information is provided without warranty and is to be used at the risk of the reader. All trademarks, logos and copyright issues are property of their respective owners. The creator of this page takes no responsibility for the way you use the information provided on this site.