• সুদীপা দাশগুপ্ত

 

আর কত দিন চলবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ? এই ভাইরাস কি সত্যিই পৃথিবী থেকে কোনো দিন যাবে না? নাকি প্রতিনিয়ত তাকে ফাঁকি দেয়ার ফিকির খুঁজেই বাঁচতে হবে? মাঝে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কোভিডের নানা নতুন রূপ। স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারিতে ফের কমতে শুরু করেছে লোকের সংখ্যা। অনেকেই কমবেশি আক্রান্ত। এর মাঝে অনেকে যেমন হতাশায় ভেঙে পড়ছেন, অনেকে তেমন এতেই খুঁজে নিচ্ছেন আত্মবিশ্বাস। তাদের ধারণা, সাধারণের মধ্যে রোগটা ছড়িয়ে পড়লে তবেই তো তৈরি হবে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ বা কমিউনিটি অনাক্রম্যতা। তাতেই ভাইরাসের প্রকোপ কমবে। কেউ কেউ আবার বলছেন, এ তো খাল কেটে কুমির আনা!

কমিউনিটি অনাক্রম্যতা ব্যাপারটা আসলে কী?

চিকিৎসকদের মতে, যখন কোনো দেশের জনসংখ্যার বিরাট অংশ কোনো নির্দিষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে বা টিকাকরণের মাধ্যমে শরীরে সেই রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে নেন, তখন বাকিরা পরোক্ষ ভাবে সেই রোগ থেকে নিরাপদ হয়ে যান। আক্রান্ত ব্যক্তি নতুন কাউকে সংক্রমিত করতে না পারার ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর শৃঙ্খলটি ভেঙে যায়। এমন বহু সংক্রমিত রোগকে আগে গোষ্ঠী সুরক্ষার মাধ্যমে কাবু করা সম্ভব হয়েছে। যেমন, পোলিয়ো, স্মল পক্স, হাম ইত্যাদি রোগের প্রকোপ কমেছে গোষ্ঠী অনাক্রম্যতা হাতিয়ারকে ব্যবহার করেই।

২০২০ সালের মার্চ মাসে ভারতে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর হদিস মেলে। তার পরে কেটে গিয়েছে দু’বছরেরও বেশি সময়। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে প্রায় ৬৬.৪ শতাংশ মানুষের করোনা দুটি টিকাই নেওয়া হয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে নিয়ে ফেলেছেন বুস্টারও। তবুও কেন মানুষের মধ্যে গোষ্ঠী অনাক্রম্যতা তৈরি হয়নি? কেন বারবার কোভিড-স্ফীতি দেখা দিচ্ছে?

চিকিৎসক অদ্রিজা রহমানের মতে, ‘একই ভাইরাস বার বার কোনো গোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমিত হলে তবেই ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরি হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ আরএনএ ভাইরাস নিজেকে এমন ভাবে বদলে ফেলছে যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরির পথে তা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই কারণেই একজন মানুষ একাধিকবার করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। তা ছাড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতাটা এতটাই বেশি যে, তারা বার বার মানবশরীরে আক্রমণ করছে। সময়ের সাথে সাথে তাদের ক্ষমতা কমছে বটে। সেই কারণেই ইদানীং কোভিডের খুব বেশি মারাত্মক উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। তবে এই ভাইরাস আবার রূপ পরিবর্তন করে মারাত্মক আকারে দেখা দেবে না, সে কথা কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না। তাই এখনও কোভিডের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে বাড়তি সতর্কতা নিয়ে চলতেই হবে।’

তবে কি টিকাকরণেও কোনো ফল মিলছে না?

চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, "হার্ড ইমিউনিটি যে একেবারেই তৈরি হয়নি, সে ধারণা কিন্তু ভুল। টিকাকরণের নয় থেকে ১০ মাস পরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিবডিগুলো শরীরে তৈরি হয় তার পরিমাণ ও কার্যকারিতা দুই-ই কমতে শুরু করে। তা ছাড়া কোভিডের যেই টিকাগুলো তৈরি করা হয়েছে সেগুলি কিন্তু কোভিডের ‘উহান’ স্ট্রেনের উপর নির্ভর করেই বানানো। গত দু’বছরে কোভিডের রূপে বিস্তর ফারাক এসেছে। নতুন কোনো টিকা কিন্তু সেভাবে তৈরি হয়নি। যে টিকা বাজারে আছে, তা নিঃসন্দেহে কোভিডের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তবে ভ্যাকসিন আপডেট করা হলে তা আরো ভাল কাজ করত। এই দুই কারণে কোভিডের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি তৈরিতে বেশ বাধা পড়েছে।’’

কোভিড কি তার শক্তি হারিয়েছে?

এই বিষয় চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেছেন, ‘এ কথা ঠিক যে ইদানীং যারা কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে খুব মারাত্মক উপসর্গ চোখে পড়ছে না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও অনেক কমেছে। কিন্তু ‘পোস্ট কোভিড এফেক্ট’ নিয়ে কিন্তু আমরা এখনও বেশ চিন্তিত। যারা কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন, অনেকের ক্ষেত্রেই কিন্তু কোভিডমুক্ত হওয়ার পরও শারীরিক নানা জটিলতা থেকে যাচ্ছে। কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর রোগীদের মধ্যে হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি নানা প্রকার শারীরিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি একাধি বার কোভিডে আক্রান্ত হলে তার শরীরের কোভিড-পরবর্তী জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাই এখনই কোভিডকে সাধারণ জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জার সাথে তুলনা করা যাচ্ছে না। করোনামুক্তদের মধ্যে অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যেকোনো একটা উপসর্গ রয়ে যাচ্ছে এক মাস পরও। কিছু ক্ষেত্রে সেটা ক্লান্তি বা নিদ্রার অভাবের মতো মৃদু উপসর্গ, কিছু ক্ষেত্রে আবার শ্বাসকষ্টের মতো জটিল সমস্যাও। এই প্রবণতাকেই বলা হচ্ছে পোস্ট কোভিড সিনড্রোম বা লং কোভিড। এই রকম সমস্যায় ভুগলে কিন্তু দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই শ্রেয়।’’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

DISCLAIMER : Views expressed above are the author's own. The contents provided here are only for educational assistance & information purposes only. Information is provided without warranty and is to be used at the risk of the reader. All trademarks, logos and copyright issues are property of their respective owners. The creator of this page takes no responsibility for the way you use the information provided on this site.