অন্যান্য সকল টিকার মতোই করোনার টিকার ক্ষেত্রেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু একটি তথ্য আপনাকে অবাক করতে পারে যে, করোনার টিকা গ্রহণে নারীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পুরুষদের তুলনায় বেশি হয়।

আমেরিকার রোগনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) যারা করোনার টিকা নিয়েছেন তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেছে। সিডিসির একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন মরবিডিটি অ্যান্ড মরটালিটি উইকলিতে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার টিকার অধিকাংশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই মারাত্মক নয় এবং নারীদের মধ্যে বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

সিডিসির সংগৃহীত তথ্যে উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল- টিকা গ্রহণের স্থানে ব্যথা ও ফোলা, মাথাব্যথা, মাথাঘোরানো, ক্লান্তি, শীতের অনুভূতি ও জ্বর। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বস্তিকর না হলেও স্পষ্ট লক্ষণ যে শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা তৈরি হচ্ছে। মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো টিকা গ্রহণের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হয়ে থাকে, যেমন- অ্যানাফাইল্যাক্টিক শক বা অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার টিকার মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিরল ব্যাপার।  একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিকা নেয়া ১৪ মিলিয়ন লোকের মধ্যে ১১৩ জন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারা গেছেন, যাদের দুই-তৃতীয়াংশই বার্ধক্যে ছিলেন। কিন্তু প্রত্যেকের মৃত্যুর মূল কারণ যে টিকা ছিল একথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

লিঙ্গভেদে যে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তারতম্য হয় তা সাধারণ মানুষকে অবাক করলেও চিকিৎসকদের কাছে মোটেই বিস্ময়কর নয়। কেবল করোনার টিকা নয়, অন্য টিকা গ্রহণেও নারীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হয় তার প্রমাণ আছে। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু মহামারির সময় টিকা নেয়া নারীদের অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনের হার পুরুষদের চেয়ে চারগুণ বেশি ছিল।

এ প্রতিবেদনে টিকা নেওয়াতে নারীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পুরুষদের চেয়ে বেশি হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো।

* হরমোন ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে: নিউ ইয়র্কের নর্থওয়েলথ হেলথের ফ্যামিলি মেডিসিন স্পেশালিস্ট বেটসি কৈকেল জানান, নারীর হরমোন ইস্ট্রোজেন ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া (ইমিউন রেসপন্স) বাড়াতে পারে। অন্যদিকে পুরুষের হরমোন টেস্টোস্টেরন ইমিউন সাপ্রেস্যান্ট হিসেবে কাজ করে তথা ইমিউন সিস্টেমকে দমিয়ে রাখতে চায়। এদিকে এ কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পুরুষদের জটিলতা ও মৃত্যুহার নারীদের চেয়ে বেশি।

* নারীদের ইমিউন সিস্টেম বেশি স্বাস্থ্যবান হতে পারে: গবেষকদের ধারণামতে- যার ইমিউন সিস্টেম যত স্বাস্থ্যবান, তার করোনার টিকা জনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তত বেশি হতে পারে। হয়তো একারণে নারীদের করোনার টিকা গ্রহণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার বেশি। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের ইমিউন সিস্টেম পুরুষদের তুলনায় স্বাস্থ্যবান। 

* নারী ও পুরুষের জিনগত পার্থক্য রয়েছে: ডা. কৈকেল বলেন, ‘নারী-পুরুষের হরমোন যেমন করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তারতম্য ঘটাতে পারে, তেমনি জিনও ভূমিকা রাখতে পারে। নারীর ক্রোমোসোমে ইমিউন জিন বেশি থাকে। হয়তো একারণে নারীদের করোনার টিকা গ্রহণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার বেশি।’ জিনোম রিসার্চে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিঙ্গভেদে জেনেটিক প্রিডিস্পজিশন ভিন্ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ জিনের প্রভাবে নারী ও পুরুষ উভয়েরই কিছু রোগ বা প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বেশি। কোন ধরনের জেনেটিক প্রিডিস্পজিশন নারীদের করোনার টিকা জনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার বাড়াচ্ছে তা জানতে বড় পরিসরে গবেষণার অপেক্ষা করতে হবে।

 নারীদের জন্য টিকার ডোজ কড়া হতে পারে: নারী ও পুরুষ উভয়কে করোনার টিকার একই ডোজ দেয়া হচ্ছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পুরুষের জন্য যে ডোজ স্বাভাবিক তা নারীর জন্য কড়া বা শক্তিশালী হতে পারে। টিকার ডোজ কড়া হলে তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাও বেশি। আরেকদল বিশেষজ্ঞের মতে, শরীরের ওজন অনুপাতে ডোজ দেয়া হচ্ছে না বলে নারীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হচ্ছে। কিছু প্রাথমিক গবেষণায় টিকার উচ্চ ডোজে বেশি উপসর্গের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কতিপয় গবেষকদের মতে, ওজন বা বিএমআই অনুসারে টিকার ডোজ নির্ধারণ করলে নারী-পুরুষের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হারে সমতা আসতে পারে। এমনকি এভাবে টিকা দিয়ে তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও প্রতিরোধ করা যেতে পারে।অন্তত পুরুষদের যে ডোজ দেয়া হচ্ছে নারীদের তার চেয়ে কম ডোজের টিকা প্রদানের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

 এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

DISCLAIMER : Views expressed above are the author's own. The contents provided here are only for educational assistance & information purposes only. Information is provided without warranty and is to be used at the risk of the reader. All trademarks, logos and copyright issues are property of their respective owners. The creator of this page takes no responsibility for the way you use the information provided on this site.