Print
Hits: 392

বিদেশিদের হাতে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। শুধু গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নয় পর্যায়ক্রমে পুরো টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। 


 এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচকের) পরিচালনা পর্ষদ। ১১ আগস্ট বেবিচকের ২৮১তম বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।সভায় বেসরকারিভাবে টার্মিনাল পরিচালনার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়েরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
 বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের সভাপতিতে বেবিচক পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

 
বর্তমানে শাহজালালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হলে বিমানের ১ হাজার থেকে ১৫শ কোটি টাকার ব্যবসা হাতছাড়া হবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম ছেড়ে দেওয়া হয়েছে দুবাইভিত্তিক বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানি ‘ডানাটা’র কাছে। শাহ আমানত বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও পাচ্ছে ডানাটা।


 বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের নানা অব্যবস্থাপনার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি কাটছে না। নানা চেষ্টা-তদবির আর শত শত কোটি টাকা খরচ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না যাত্রীদের। উলটো বিভিন্ন কেনাকাটায় হচ্ছে দুর্নীতি আর লুটপাট। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকে আয় নিয়েও চলছে ব্যাপক অনিয়ম। দেরিতে ফ্লাইট ছাড়ার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি দেশে আসা যাত্রীদের লাগেজ পেতেও দেরি হচ্ছে। এছাড়া হরহামেশা হচ্ছে লাগেজ কাটাছেঁড়া আর চুরি। বিমানের স্টাফরা মাথা থেকে বেল্টে আছড়ে ফেলছে লাগেজ। এ কারণে প্রতিনিয়ত ভেঙে যাচ্ছে লাগেজ ও ভেতরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মালামাল। লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগ থেকে পাওয়া অধিকাংশ লাগেজে গুরুত্বপূর্ণ ও দামি মালামাল থাকে না।


বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, মূলত গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা আর যাত্রী ভোগান্তির কারণে থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে।

 বিমানকে বহুবার বলা হয়েছে, এখনো বলা হচ্ছে কিন্তু তারা শুনছে না। এটা খুবই দুঃখজনক। তাদের যথেষ্ট কঠোরভাবে বলা হয়েছে একটি লাগেজও যাতে নষ্ট না হয়। লাগেজটাকে যেন মানুষের মতো ফিল (অনুভব) করা হয়। প্রাণীর মতো ফিল করা হয়। কিন্তু বারবারই তারা এটি ভুলে যাচ্ছে। ভুলে যাওয়ার কারণ হলো, তাদের প্রতি প্রপার (সুষ্ঠু) সুপারভিশন নেই। 


তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং দুবাইভিত্তিক ডানাটাকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। কোনো যাত্রী ভোগান্তি নেই। সরকারের আয়ও বেড়েছে।


  চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধনের পর আমরা লাগেজ হ্যান্ডলিং, মালামাল লোড-আনলোডসহ টার্মিনালের যাবতীয় অপারেশনাল কাজ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে প্রশাসনিক, নিরাপত্তা, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হাতেই থাকবে। 


 বিশ্বের উন্নত বিমানবন্দরে এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি যাত্রীরা দ্রুততার সঙ্গে সেবা পাবেন এবং যে কোনো কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জবাবদিহিতা থাকবে।’ এ বিষয়ে দুই সদস্যের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। পরামর্শক প্রতিবেদন হাতে পেলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। সর্বোপরি সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সুত্র-ইত্তেফাক অনলাইন