Print
Hits: 11962

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই টালমাটাল বিশ্বের পরিস্থিতি। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়ছে, নিত্যপণ্যের দাম চলে যাচ্ছে হাতের নাগালে। হঠাৎ আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় টান পড়েছে বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা সংক্ষেপে ফোরেক্স রিজার্ভ হচ্ছে কোনো দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা লেনদেনযোগ্য বিদেশি মুদ্রার মজুত। বেশিরভাগ দেশই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসেবে মার্কিন ডলার হাতে রাখে। এছাড়া ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো, চীনা ইউয়ান, জাপানি ইয়েন, ব্রিটিশ পাউন্ড, সুইস ফ্রাঁও জমা রাখা হয়। এর সঙ্গে স্বর্ণের মজুত, স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) রিজার্ভ পজিশনও হিসাবে ধরা হয়।

আমদানি ব্যয় মেটানো, দেশের আর্থিক বিপর্যয় মোকাবিলা, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন রোধ, মুদ্রানীতি শক্তিশালীকরণ, বাজেট বাস্তবায়ন, বৃহৎ প্রকল্পে অর্থের জোগানসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ নিশ্চিত করতে এ ধরনের রিজার্ভ হাতে রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিশ্বের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে চীনের কাছে। ২০২২ সালের জুনে দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২৪ হাজার ৬৫৯ কোটি মার্কিন ডলার।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রিজার্ভ জাপানের। তাদের হাতে রয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ১২৫ কোটি ডলার। তৃতীয় সুইজারল্যান্ডের রিজার্ভ ১ লাখ ৪ হাজার ২৬৬ কোটি ডলার।

বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ভারতের। এ বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত তাদের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় ছিল ৫৭ হাজার ২৭১ কোটি ডলার।

এরপর শীর্ষ দশে থাকা বাকি দেশগুলোর রিজার্ভের পরিমাণ যথাক্রমে রাশিয়ার ৫৬ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার (৫ম), তাইওয়ানের ৫৪ হাজার ৮৯৬ কোটি ডলার (৬ষ্ঠ), হংকংয়ের (চীনের স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল) ৪৬ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার (৭ম), সৌদি আরবের ৪৫ হাজার ৬৭ কোটি ডলার (৮ম), দক্ষিণ কোরিয়ার ৪৩ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার (৯ম) এবং ব্রাজিলের ৩৪ হাজার ৯৫ কোটি ডলার (১০ম)।

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৩ হাজার ৪৪৩ কোটি ডলারের। এ তালিকায় বিশ্বের মধ্যে তাদের অবস্থান ১৩তম।

বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। গত জুন মাসে দেশটির রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ১৮২ কোটি ডলার। যদিও জুলাইয়ে তা আরও কমেছে।

এরপর রয়েছে নেপাল। ৭৫তম স্থানে থাকা দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ হাজার ৪৭ কোটি ডলার। বৈশ্বিক তালিকায় ৭৯তম অবস্থানে থাকা পাকিস্তানের রিজার্ভ বর্তমানে ৯৩২ কোটি ডলার।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সবশেষ পাওয়া তথ্যমতে, আফগানিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯৪৪ কোটি ডলার। তালিকায় তারা রয়েছে পাকিস্তানের একধাপ ওপরে।

১২৩ কোটি মার্কিন ডলার রিজার্ভ রয়েছে ভুটানের। তালিকায় তাদের অবস্থান ১৩৪তম। ৭৬ কোটি ডলার রিজার্ভে রেখে তালিকার ১৪৬তম অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপ।

নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করা শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের কোনো তথ্য নেই উইপিডিয়ায়। তবে অন্যান্য সূত্র বলছে, এ বছরের জুনের শেষে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ছিল ১৮৬ কোটি ডলার, যার মধ্যে চীনের সঙ্গে ১৫০ কোটি ডলার কারেন্সি সোয়াপও অন্তর্ভুক্ত।

এই তালিকা তৈরিতে মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য ব্যবহার করেছে উইকিপিডিয়া। তাদের হিসাবে, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র কিরিবাতির। ২০২০ সালে তাদের হাতে ছিল মাত্র ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।

সূত্র: উইকিপিডিয়া, ব্লুমবার্গ