২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের স্তর পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সুখী উন্নত- সমৃদ্ধ সোনর বাংলা গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রবিবার জাতীয় সংসদে ‘২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরের কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল হতে র্অথ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণ বিল’ পাসের মাধ্যমে এই বাজেট গৃহীত হয়। জাতীয় বাজেটের খুটিনাটি সম্পর্কে জেনে নিনঃ

  • বাজেটের পরিমাণ ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা
  • অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৩.০৬.২০১৯ তারিখে রোজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ স্লোগান সংবলিত এ বাজেট পেশ করেন। যা ৩০ জুন রবিবার জাতীয় সংসদে গৃহীত/পাস হয়।
  • জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮.২০ শতাংশ। ঘাটতি এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।
  • মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশ।
  • ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে।
  • প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, এ ছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।
  •  উন্নয়ন ব্যয় দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
  •  অনুন্নয়ন ব্যয় তিন লাখ ২০ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা।
  • চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে প্রস্তাবিত বাজেট ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ বড়।
  • প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
  • প্রস্তাবিত বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
  • এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
  • ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এ মেয়াদের প্রথম বাজেট। এবারও সংসদে বিরোধীদলের উপস্থিতিতে এ বাজেট পেশ করা হয়েছে।
  • প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
  • প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামোগত খাতে মোট এক লাখ ৪৩ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যা মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর মধ্যে মানব সম্পদ খাতে- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে এক লাখ ২৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো খাতে এক লাখ ৬৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৬৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা, বৃহত্তর যোগাযোগ খাতে ৬১ হাজার ৩৬০ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা রয়েছে। সাধারণ সেবা খাতে এক লাখ ২৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
  • এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) এবং বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ ৩৩ হাজার ২০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৬৩৫ শতাংশ। সুদ পরিশোধ বাবদ ৫৭ হাজার ৭০ কোট টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ। নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের দশমিক ২৪ শতাংশ।
  • উন্নয়নের দাবি নিয়ে যেসব খাত রয়েছে তার মধ্যে  বরাদ্দের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। শতকরা হিসাবে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ বাজেটের প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের জন্য। যা চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এমন বাড়তি বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
  • কারিগরি এবং মাদ্রাসা-এই দুই শিক্ষার ওপরই একই সঙ্গে সুনজর রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে, যেখানে এই দুই ধরনের শিক্ষার জন্য মোট বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা থেকে সাত হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। 
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা দীর্ঘ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তাদের জন্য সুখবর হলো এমিপিওভুক্ত কার্যক্রমের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
  • ২০১৯-২০ অর্থবছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নের জন্য নয় হাজার কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন বরাদ্দের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি।

তথ্যসূত্রঃ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা হতে সংকলিত।