জাতীয় বাজেট বাংলাদেশ সরকার প্রণীত একটি বার্ষিক দলিল যাতে রাষ্ট্রের সাংবাৎসরিক আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব। সরকারকে দেশ চালাতে হয়, সরকারের হয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের বেতন দিতে হয়, আবার নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট বানানোসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে হয়। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে কোথায় কত ব্যয় হবে, কোথা থেকে কেমন আয় হবে ইত্যাদি পরিকল্পনার নামই বাজেট । অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র হ্রাস এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য গৃহীত সুনিদিষ্ট জাতীয় কৌশলের পটভূমিতে জাতীয় বাজেট প্রণীত হয়। জাতীয় বাজেট মূলত দুটি অংশে বিভক্ত । প্রথম অংশে থাকে রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত বিষয়াদি। এই অংশে সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থা ও আদায় সংক্রান্ত প্রস্তবসমূহ বিবৃত থাকে।  দ্বিতীয় অংশে থাকে সরকারী ব্যয়ের প্রস্তাব সমূহ।

প্রতি বৎসর একটি আইনপ্রস্তাব বা "বিল" আকারে জাতীয় বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। একে বলা হয় অর্থ বিল। সংসদ সদস্যরা অনুমোদনের পর এটি আইনে পরিণত হয়। বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব প্রস্তাবসমূহ প্রণয়ন করে এবং অর্থ বিভাগ ব্যয় প্রস্তাবসমূহ প্রণয়ন করে। বাংলাদেশে প্রতি বৎসর জুন মাসে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা হয় এবং অনুমোদনের পর তা পরবর্তী অর্থবৎসরের জন্য কার্যকর হয়। ১২ মাসের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা হয় যা চলতি বছরের ১লা জুলাই থেকে পরবর্তী বৎসরের ৩০শে জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। দেশের অর্থ মন্ত্রী জাতীয় সংসদের অর্থ বিল পেশ করেন। প্রতি বছর জুন মাসে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সরকারের পক্ষে অর্থমন্ত্রী বাজেট বিল পেশ করেন। এর আগে এই বাজেট বিল ক্যাবিনেট সভায় বিবেচনা ও অনুমোদন করা হয়।

২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের স্তর পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সুখী উন্নত- সমৃদ্ধ সোনর বাংলা গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হয়। বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

পুঁজিবাজারে প্রণোদনায় সংশোধন, আমদানি পণ্যের শুল্কহার সংশোধন, একাধিক মূসক হার প্রচলন, শেয়ারবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশ সীমাবৃদ্ধিসহ বেশ কিছু পরিবর্তন ও সংশোধনী এনে জাতীয় সংসদে অর্থ বিল ২০১৯ পাস হয়। শনিবার (২৯ জুন) অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। রবিবার জাতীয় সংসদে ‘২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরের কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল হতে র্অথ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণ বিল’ পাসের মাধ্যমে এই বাজেট গৃহীত হয়।

জাতীয় বাজেট ২০১৯ এর খুটিনাটিঃ

  • বাজেটের পরিমাণ ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
  • অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৩.০৬.২০১৯ তারিখে রোজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ স্লোগান সংবলিত এ বাজেট পেশ করেন। যা ৩০ জুন রবিবার জাতীয় সংসদে গৃহীত/পাস হয়।
  • ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এ মেয়াদের প্রথম বাজেট। এবারও সংসদে বিরোধীদলের উপস্থিতিতে এ বাজেট পেশ করা হয়েছে।
  • জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮.২০ শতাংশ।
  • ঘাটতি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।
  • মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশ।
  • ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে।
  • প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, এ ছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।
  • চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে প্রস্তাবিত বাজেট ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ বড়।
  • প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
  • প্রস্তাবিত বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
  • এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
  • প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
  • প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামোগত খাতে মোট এক লাখ ৪৩ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যা মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর মধ্যে মানব সম্পদ খাতে- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে এক লাখ ২৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো খাতে এক লাখ ৬৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৬৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা, বৃহত্তর যোগাযোগ খাতে ৬১ হাজার ৩৬০ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা রয়েছে। সাধারণ সেবা খাতে এক লাখ ২৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
  • এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) এবং বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ ৩৩ হাজার ২০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৬৩৫ শতাংশ। সুদ পরিশোধ বাবদ ৫৭ হাজার ৭০ কোট টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ। নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের দশমিক ২৪ শতাংশ।
  • উন্নয়নের দাবি নিয়ে যেসব খাত রয়েছে তার মধ্যে  বরাদ্দের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। শতকরা হিসাবে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ বাজেটের প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের জন্য। যা চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এমন বাড়তি বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
  • কারিগরি এবং মাদ্রাসা-এই দুই শিক্ষার ওপরই একই সঙ্গে সুনজর রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে, যেখানে এই দুই ধরনের শিক্ষার জন্য মোট বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা থেকে সাত হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। 
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা দীর্ঘ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তাদের জন্য সুখবর হলো এমিপিওভুক্ত কার্যক্রমের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
  • ২০১৯-২০ অর্থবছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নের জন্য নয় হাজার কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন বরাদ্দের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি।
  • উন্নত বিশ্বের মতো সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষের জন্যও পেনশন চালুর প্রতিশ্রুতি রাখা হয়েছে পাস হওয়া বাজেটে।
  • শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য সুখবর রয়েছে নতুন বাজেটে। তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তরুণরা যাতে সহজে ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী হতে পারে, সেজন্য আলাদা একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের বাজেটে। ‘স্টার্টআপ ফান্ড’ নামে এতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে।
  • দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জীবন বীমা সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে এবারের বাজেটে। এর আওতায় বীমাকারী মৃত্যুবরণ করলে, দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী ও সম্পূর্ণ অক্ষমতা বা পঙ্গুত্ববরণ করলে মূল বীমার শতভাগ পরিশোধের বিধান রাখা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের ভিত্তিতে দাবি পরিশোধের কথাও বলা হয়েছে।
  • চরম দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হচ্ছে। কৃষকের জন্য ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে চালু করা হবে শস্যবীমা। প্রাথমিকভাবে বেছে নেয়া হবে একটি জেলা। পরবর্তী সময়ে এটি ছড়িয়ে দেয়া হবে সারাদেশে।
  • রেলের আগের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে এবারের বাজেটে বরাদ্দ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
  • অর্থবিল পাস হওয়ার পর এখন তিনভাবে কালো টাকা সাদা করা যাবে। প্রথমত, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে। দ্বিতীয়ত, এলাকাভেদে নির্দিষ্ট অঙ্কের কর দিয়ে ফ্ল্যাট কিনলে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক বিনিয়োগের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ অর্থের ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এ তিন পদ্ধতিতে কালো টাকা সাদা করলে পরবর্তীতে এনবিআর অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না।
  • পাস হওয়া বাজেটে প্রবাসীদের জন্য সুখবর রয়েছে। তারা তাদের পাঠানো আয়ে ২ শতাংশ হারে ভর্তুকি পাবেন। এজন্য তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
  • গবাদিপশু, মুরগি পালন ও মাছ চাষের কয়েকটি উপকরণে শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। ফলে খামারিরা কিছুটা কম দামে এসব উপকরণ পেতে পারেন।
  • ধনীদের সারচার্জের সীমায় ছাড় দিলেও করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকাই রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। বিগত কয়েক বছরের মতো এ বছরও এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি।
  • ক্যানসারের ওষুধ তৈরিতে কাঁচামালের ওপর আরও শুল্কছাড় দেয়া হয়েছে। এতে ক্যানসার ওষুদের দাম কমতে পারে।
  • যেসব খাতে ব্যবসায়ীরা উচ্চ হারে আয়কর দেন, সেখানে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। তবে পোশাক খাতে ছাড় দিয়ে ১২ শতাংশ কর্পোরেট কর বহাল রাখা হয়েছে।
  • বিড়ি-সিগারেট, তামাক ও জর্দার দাম বাড়ছে। বাজেটে এক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে।
  • দেশীয় উৎপাদকরা যে ফ্রিজ তৈরি করেন তার উপকরণ আমদানিতে করছাড় দিয়েছে সরকার। তবে বাড়বে ওভেনের দাম।
  • ব্যক্তিগত সব গাড়ি নিবন্ধন, রুট পারমিট, ফিটনেস, মালিকানা সনদ নেয়া এবং নবায়ন মাশুলের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে গাড়ি ব্যবহারের ব্যয় বাড়বে।
  • মোটরসাইকেলের জন্য আমদানি করা বিদেশি টায়ারের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। এতে টায়ারের দাম বাড়বে।
  • এবারের বাজেটে পোশাক খাতে আরও সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ খাতে ১ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার। এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকা।
  • হোটেলে রাতযাপনে ভাড়ার ওপর উৎসে কর আরোপ হয়েছে। এতে হোটেল সেবার ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে।
  • কম্পিউটার ও ল্যাপটপ কেনার পেছনে বিনিয়োগ দেখিয়ে যে কর রেয়াত মিলত, সেটা আর মিলছে না।
  • দেশে জুতা, স্যান্ডেল তৈরিতে ব্যবহৃত পাঁচটি উপকরণে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক মওকুফ করেছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে দেশীয় পাদুকা শিল্পে উৎপাদন ব্যয় কমতে পারে।
  • অগ্নিদুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বাইরে সেবাদানকারী হোটেল, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ক্ষেত্রে রেয়াতি হারে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
  • ব্র্যান্ডের দোকান থেকে কেনাকাটায় খরচ বাড়ছে। এক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।
  • নতুন বাজেটে মুঠোফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সিম কার্ডের ওপর কর দ্বিগুণ করে ২০০ টাকা নির্ধারণ হয়েছে। সব মিলিয়ে বাড়ল মুঠোফোন কেনা ও কথা বলার খরচ।
  • স্মার্টফোনে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম ব্যাপক বাড়বে। ফিচার ফোনের কর আগের মতোই থাকবে।
  • এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চারটি উপকরণে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। সিম খোলার পিনের শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। একই হারে কমানো হয়েছে চার্জার কানেকটর পিনের শুল্ক।
  • নয় বছর পর আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলো এমপিওভুক্তির সুখবর দিলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, এজন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
  • ধনীদের সম্পদের ওপর সারচার্জ আরোপ করেছেন অর্থমন্ত্রী। অবশ্য সারচার্জে সম্পদের সীমায় ছাড় দেয়া হয়েছে।
  • বাড়ছে তেল-চিনির দাম। চিনি আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ভোজ্যতেলে আরোপ করা হয়েছে ভ্যাট।
  • বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
  • সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর হার ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% করা হয়েছে।
  • পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ বোনাস শেয়ার বা স্টক ডিভিডেন্ড দেবে, একই পরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। এক্ষেত্রে বোনাস লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি দেয়া হয়; সেক্ষেত্রে সকল বোনাস লভ্যাংশে ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে।
  • পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানি পরবর্তী নিট লাভের ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিংস, রিজার্ভসহ বিভিন্ন খাতে স্থানান্তর করতে পারবে। বাকি ৩০ শতাংশ বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে প্রতি বছর রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভসহ স্থানান্তর মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
  • শেয়ার বাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হবে। স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মূসক হার প্রচলন করা হচ্ছে।
  • তাঁত শিল্পের উপর ৫ শতাংশ মূসকের পরিবর্তে সুতার কেজি প্রতি ৪ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট হারে মূসক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশীয় শিল্প রক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু শুল্ক হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে।
  • দেশীয় মুদ্রণ শিল্পে প্রণোদনা ও বন্ড ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধ করতে দেশে উৎপাদন হয় না এমন পেপার মিলের শুল্ক হার যৌক্তিক করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি করা কতিপয় পণ্যের শুল্ক হার পূর্ণ নির্ধারণ করা হবে।

অর্থবিলের মাধ্যমে বাজেটের আইনি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে যা ছিল, চূড়ান্তভাবেও মোটামুটি তা-ই রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। অপরিবর্তিত রয়েছে কর্পোরেট কর। এতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ভ্যাটের কারণে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়বে। কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্কের প্রভাবে আমদানি ব্যয় বাড়বে। ফলে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করছি।

মোঃ কামরুজ্জামান কিরন

(তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়াসহ অনলাইন সংবাদপত্র ও অন্যান্য মাধ্যম হতে সংকলিত)