Print
Hits: 1418

বাজেট ২০২০-২১

২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যা চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ১৩.২% বেশি। টাকার অংকে এই পার্থক্য ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শীর্ষক স্লোগান সম্বলিত ১১০ পৃষ্ঠার বাজেট ।

৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট যা জিডিপির ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। 

পরিচালন ব্যয়

২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে আবর্তক ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এ আবর্তক ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এছাড়া সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্তকাজ, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগসহ মূলধনী ব্যয় হবে ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণ ও অগ্রিম বাবদ ব্যয় ৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা।

আয় ও অর্থ যোগান

বাজেট ব্যয়ের জন্য মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। আয়ের দিক থেকে আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এছাড়া এর বাইরেও ২০২০-২১ সরকার অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি ও অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেবে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি

২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতির (অনুদানসহ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, এটি মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে এই ঘাটতি মেটানো হবে বলে বাজেট অধিবেশনে জানানো হয়।

কালো টাকা সাদা

শর্তসাপেক্ষে কালো টাকা, অপ্রদর্শিত অর্থে কেনা ফ্ল্যাট ও জমি বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এবারের বাজেটে। শর্তসাপেক্ষে ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক দিয়ে শেয়ারবাজার, স্টক ডিভিডেন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিভেঞ্চার খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকছে। আয়কর রিটার্নের বাইরে থাকা অপ্রদর্শিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ টাকা, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র পুনরায় রিটার্ন দাখিলের শর্তে ১০ শতাংশ হারে বাড়তি শুল্ক দিয়ে বৈধ করার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে।

আবগারি শুল্কের হার বাড়ছে

এবারের বাজেটে ব্যক্তিগত করের হার কমানো হলেও ব্যাংক হিসাবের স্থিতির ওপর আবগারি শুল্কের হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

খাত ভিত্তিক বাজেট

দাম বাড়তে পারে:

দাম কমতে পারে

চলতি ২০১৯-২০ সম্পূরক বাজেট

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৪৬ হাজার ৫১৬ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট সংসদে পাস হয়েছে। সোমবার (১৫ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২০ উত্থাপন করেন। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের মূল বরাদ্দের থেকে বেশি খরচ করেছে তার অনুমোদন নিতেই এই বাজেট পাস করা হয় প্রতি বছর। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সংশোধনের ফলে তা ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের সাধারণ বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে পেশ হয় চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ২৪ টি মঞ্জুরি দাবির ভিত্তিতে সম্পূরক বাজেটটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

সংসদে উত্থাপিত বিদায়ী অর্থবছরের সম্পূরক আর্থিক বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অনুকূলে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।

সংশোধিত বাজেটে ২৬টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ৪৬ হাজার ৫১৬ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা বেড়েছে এবং ৩৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ১৮ হাজার ৩৫৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা কমেছে। সার্বিকভাবে ২১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বরাদ্দ নিট দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।

সম্পূরক বাজেটে অর্থ বিভাগ সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ৩৫৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।  সবচেয়ে কম ১ কোটি ৫৪ লাখ কম বরাদ্দ পেয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সম্পূরক বাজেট করোনা দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্যসেবা খাত, স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত তিন হাজার ৬০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।