আধুনিক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাতজন বিজ্ঞানীর নাম নিলে জামাল নজরুল ইসলামের নাম অবলীলায় চলে আসবে। সারাবিশ্বে তিনি জে’ন ইসলাম নামে পরিচিত এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের কাছে বাংলাদেশ জেএন ইসলামের দেশ হিসাবে পরিচিত।

“জামাল নজরুল ইসলাম” কখনো শুনেছেন এই নামটি? যদি শুনেই থাকেন তাহলে এই নামটি সম্পর্কে কতটুকু জানেন? অনেকেই বলবেন আমি কখনো এই নামটি শুনিই নি!! অথচ স্টিফেন হকিংয়ের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আমরা সবাই জানি। যারা জামাল নজরুল ইসলামকে চিনেন না বা তার সম্পর্কে খুব কমই জানেন তাদের জন্য এই লেখা।

জামাল নজরুল ইসলাম হলেন একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী যিনি একাধারে পদার্থবিজ্ঞান, জোতির্বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং বিশ্বতত্ত্ববিদ্যায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী এবং প্রসিদ্ধ দেশপ্রেমিক। জামাল নজরুল ইসলামকে যদি স্টিফেন হকিংয়ের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে একটুও ভুল হবেনা। তিনি আসলে ওই পর্যায়েরই বিজ্ঞানী ছিলেন। কিন্তু প্রচার-প্রচারনা এবং পর্যাপ্ত মুল্যায়নের অভাবে তিনি আজীবন থেকে গেছেন পর্দার অন্তরালেই।

জন্ম এবং শিক্ষাকাল: জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৪৯ সালের ২৪ জানুয়ারি ঝিনাইদহে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন তৎকালিন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ার একজন বিচারপতি। তার বাবার চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে কলকাতায়। ক্লাস নাইন পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়ালেখা করেন। উল্লেখ্য, চিটাগাং কলেজিয়েট স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় তিনি এত ভালো ফলাফল করেছিলেন যে শিক্ষকরা তাকে ডাবল প্রমোশন দিয়ে এক শ্রেণী উপরে ভর্তি করেছিলেন!! লরেন্স কলেজে-পাকিস্তানে কিছুদিন পড়ালেখা করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন।১৯৫৯ এ তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাংফশনাল গনিত এবং থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সে অনার্স করেন। মজার ব্যাপার হলো ট্রিনিটি কলেজ থেকে গনিতে ট্রাইপস পাশ করতে সাধারণত তিন বছর সময় লাগে, তিনি তা দুই বছরে শেষ করে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি ক্যামব্রিজ থেকে গনিত এবং ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

অনেকেই জানেন না যে জামাল নজরুল ইসলাম একসময় নন্দিত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের রুমমেট ছিলেন!! জামাল নজরুল ইসলাম সম্পর্কে স্টিফেন হকিং নিজেই বলেন-“আমরা ছিলাম রুমমেট, বন্ধু এবং পরস্পরের শিক্ষক” কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াকালীন ফাদার শোরে তাকে ডাকতেন জীবন্ত কম্পিউটার বলে! তার হিসাব কষতে কম্পিউটারের প্রয়োজন হতো না। তিনি বলতেন,”কম্পিউটার আমার কাছে অপ্রয়োজনীয়”। তবে বর্তমানে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তাকে তিনি অস্বীকার করেননি। জেএন ইসলাম সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীমহলে জিনিয়াস ইসলাম নামেও পরিচিত ছিলেন। ভারতের বিখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী জয়ন্ত নারলিকার সহপাঠী ছিলেন। ফ্রেডরিক হয়েল, নোবেল বিজয়ী ব্রায়ান জোসেফসন, আবদুস সালাম, অমর্ত সেন ছিলেন জামাল নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াকালীন ফাদার শোরে তাকে ডাকতেন জীবন্ত কম্পিউটার বলে!

বিজ্ঞানে অবদান: তিনি বর্তমান পদার্থবিজ্ঞানে এবং গনিতে অসামান্য অবদান রাখেন। পদার্থ এবং গনিতে তার লেখা প্রচুর বই রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া এবং ওয়াসিংটনে তিনি একজন গবেষক হিসাবে কাজ করেছেন। লন্ডনের কিংস কলেজ ও সিটি ইউনিভার্সিটিতেও কিছুদিন কাজ করেন। তিনি যেসব বিষয়ে গবেষণা করেছেন বা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন-ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, ফলিত গনিত, মহাকর্ষ, আপেক্ষিক তত্ত্ব, জোতির্বিজ্ঞান, কোয়ান্টাম থিওরি ইত্যাদি।

  • ২০০১ সালে যখন বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী বলেছিলেন পৃথিবী ধ্বংস হতে চলেছে তখন তিনি সেটা ভুল প্রমানিত করেছিলেন।
  • ১৯৬০-১৯৮০ পর্যন্ত হকিং যেসব বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন তার মধ্যে জামাল নজরুল ইসলাম ও শামিল ছিলেন।
  • নজরুল ইসলামের “কৃষ্ণবিবর” নামক গ্রন্থটি হকিংয়ের “ব্ল্যাক হোল থিওরি” প্রকাশের অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত হতো।
  • জেএন ইসলামের “দ্যা আল্টিমেট ফেইট অফ ইউনিভার্স” বইটি লেখা হয়েছিলো ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু স্টিফেন হকিংয়ের “অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম” লেখা হয় ১৯৮৮ সালে। বই দুইটির তুলনা করলে একটি আরেকটির চেয়ে কম যাবে না কিন্তু নজরুল ইসলামেরটা আলোচিত হয়েছে খুবই কম।
  • ইসলামের “রোটেটিং ফিল্ডস অফ জেনারেল রিলেটিভিটি” বইটি বর্তমান বিজ্ঞানের এক অদ্বিতীয় বই।
  • তার লেখা “দ্যা আল্টিমেইট ফেইট অফ ইউনিভার্সই কোনো বাঙালির লেখা একমাত্র বই যা হিব্রু ভাষায় অনুবাদ হয়েছে!!
  • তার তিনটি বই এবং দুটি আর্টিকল ক্যাম্ব্রিজ, অক্সফোর্ড, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি সহ আরো অনেক নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়।
  • তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানের ফিলোশিপ অর্জন করেন ১)থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমী অফ সাইন্স। ২)ক্যামব্রিজ ফিলোসোফিক্যাল সোসাইটি। ৩)রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি। ৪)বাংলাদেশ একাডেমী অফ সাইন্স। ৫)ইসলামিক একাডেমী অফ সাইন্স।তিনি এপর্যন্ত প্রচুর পুরস্কার এবং সম্মাননা অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ একাডেমী অফ সাইন্স থেকে স্বর্ণপদক, একুশে পদক, বিদেশে বিভিন্ন সম্মাননা এবং ফেলোশিপ এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পুরস্কার।

দেশপ্রেম: এত বড় বিজ্ঞানী হয়েও জামাল নজরুল ইসলাম বিখ্যাত হয়ে উঠতে না পারার কারন হলো তার অকৃত্রিম দেশপ্রেম। ভাবতেই অবাক লাগে যে জামাল নজরুল ইসলাম সম্পর্কে তার স্বদেশী আমরা বাঙালিরাই তাকে বিদেশীদের থেকেও কম চিনি!! তার যতটা সম্মান পাওয়ার কথা তার শতভাগের একভাগ সম্মানও তাকে আমরা দিতে পারিনি। আমেরিকা-লন্ডনে এত বড় পদে থেকেও, এত সম্মান পাওয়া সত্বেও তিনি ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং চট্টগ্রাম কলেজে দীর্ঘদিন অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার সাথে প্রায়ই স্টিফেন হকিংয়ের সাথে তুলনা করা হয়। বলা হয় তার মেধা এবং জ্ঞান স্টিফেন হকিং থেকেও অনেক বেশি কিন্তু শারীরিক অক্ষমতা এবং বিদেশি হওয়ায় হকিং বেশি আলোচিত হয়েছিলেন।

কিন্তু জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশি এবং বাঙালিরা বিজ্ঞান কম বোঝে এজন্য তিনি বিশ্বের বিভিন্ন  বিজ্ঞানীদের কাছে মুল্যায়ন পেলেও নিজে দেশেই মুল্যায়ন পাননি!! প্রচারনার অভাবে ন্যায্য সম্মানটুকুও পাননি। আজ স্টিফেন হকিংকে নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা হলেও জামাল নজরুল ইসলামকে নিয়ে কিছুই হয় না। ১৬ই মার্চ ২০১৩ এ তিনি চট্টগ্রামে মৃত্যুবরন করেন। গরিবুল্লাহ শাহ মাজারে তাকে দাফন করা হয়। আমাদের মাঝ থেকে চিরতরে চলে গেলেও তার অবদান এবং কৃতিত্বের জন্য পৃথিবীর বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ।