Print
Hits: 427

গত ৩১ আগস্টের দিন খুব ভোরে সর্বশেষ মার্কিন সেনা কাবুল ত্যাগ করে। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরের আফগানিস্তান যুদ্ধ। ২০১১ সালে যুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন কাবুলের বাগরাম থেকে শুরু করে কান্দাহার পর্যন্ত অন্তত ১০টি মার্কিন সেনাঘাঁটি ছিল। এসব ঘাঁটিতে মোতায়েন ছিল প্রায় ১ লাখ সেনা। যা এখন আর নেই। সেনা প্রত্যাহারের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, প্রয়োজন হলে শত্রুর ওপর আকাশ থেকে বিমান হামলা চালাবে বিমানবাহিনী। সেটা করা হবে এশীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করে। শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বকেই সামরিক জালে ঘিরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। পৃথিবীর অন্তত ৮০টি দেশে প্রায় ৭৫০ সেনাঘাঁটি রয়েছে দেশটির। ইতিহাসে কোনো দেশ বা সাম্রাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো এত সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেনি।

ব্রিটিশ ও ফরাসি সাম্রাজ্য এক সময় বিশ্বব্যাপী অনেক ঘাঁটি স্থাপন করলেও আজকের যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির তুলনায় তা খুব সামান্যই। ১৫৯টি দেশে রয়েছে সেনা উপস্থিতি। মোতায়েন রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার সেনা। এসব সামরিক ঘাঁটি ও হাজার হাজার সেনার পেছনে অঢেল অর্থও ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্র যা বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মোট ব্যয়ের চেয়েও বেশি। বিশ্বের ইতিহাস নিয়ন্ত্রিত হয়েছে যুদ্ধ, আগ্রাসন, সশস্ত্র বিদ্রোহ এবং অন্যান্য সামরিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। আজকের আন্তর্জাতিক সীমানা এবং বিশ্ব ব্যবস্থা মূলত নির্ধারিত হয়েছে সামরিক শক্তি আর যুদ্ধের মাধ্যমে। আগের সেই প্রভাব-প্রতিপত্তি ক্ষুণ্ন হলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সেনাঘাঁটিগুলোই যার প্রাণ। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের কতগুলো সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, ঘাঁটিগুলো কীভাবে পরিচালিত হয় তা নিয়ে ‘বেস ন্যাশন’ নামে একটি বই লিখেছেন মার্কিন নৃবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড ভাইন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, নিজ দেশের বাইরে পৃথিবীর অন্তত ৮০টি দেশ ও ভূখণ্ডে স্থল, নৌ ও বিমান মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫০টির বেশি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের। কারণ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের সঠিক তথ্য-উপাত্ত কখনোই প্রকাশ করে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘাঁটির মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ঘাঁটি রয়েছে এশিয়ায় অন্যতম প্রধান মিত্র জাপানে, ১২০টি। এরপরই রয়েছে ইউরোপের জার্মানি। দেশটিতে মোট ১১৯টি মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। ৭৩টি মার্কিন ঘাঁটির জায়গা দিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে এশিয়ায় তাদের আরেক মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭০ বছর পরও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের এখনো অনেক ঘাঁটি রয়েছে। এর মধ্যে ব্রিটেনে ২৫টি, ইতালিতে ৪৪টি ও স্পেনে ৪টি ঘাঁটি রয়েছে। রিসেপ তায়েপ এরদোগানের দেশ তুরস্কেও বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। রয়েছে ছোট-বড় অনেকগুলো ঘাঁটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘাঁটিটির নাম আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটি যার অবস্থান কাতারের দোহায়। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঘাঁটিতে ১১ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। ২৪ হেক্টর জায়গার এই ঘাঁটিতে একসঙ্গে অসংখ্য ড্রোনের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ১০০টি যুদ্ধবিমান রাখা যায়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাঁটি রয়েছে কুয়েত ও সৌদি আরবে। দেশ দুটিতে ১০টি করে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। এছাড়া ওমানে ৬টি, সিরিয়ায় ৪টি ও জর্ডানে ২টি ঘাঁটি রয়েছে। ইরানকে ঘিরেও বেশ কিছু ঘাঁটি করে গড়ে তুলেছে ওয়াশিংটন। আঞ্চলিক মানচিত্রের দিকে তাকালে একদম সহজেই চোখে পড়বে ইরানের দুই পাশে মার্কিন বাহিনীর অন্তত ১৯টি ঘাঁটি রয়েছে। আর মধ্য-এশিয়ার কয়েকটি দেশ ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোকে বিবেচনায় নিলে ইরানকে ঘিরে থাকা মার্কিন ঘাঁটির সংখ্যা অন্তত ২৫টি। তবে বহুসংখ্যক গোপন ঘাঁটিও রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রের বড় সামরিক উপস্থিতির পাশাপাশি সেনাঘাঁটিও রয়েছে। কিউবার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে নৌঘাঁটি ওয়াশিংটনের সবচেয়ে পুরনো ঘাঁটিগুলোর একটি। ১১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই ঘাঁটি উনিশ শতকের শেষ সময় থেকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে। অসংখ্য ঘাঁটির পাশাপাশি পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার মার্কিন সেনা। ‘কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সায়েন্স জার্নাল’-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টের তথ্য-উপাত্ত মতে, বিশ্বের ১৫৯টি দেশে প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এর মধ্যে জাপানেই রয়েছে সর্বাধিক সংখ্যক ৫৩ হাজার ৭০০ হাজার সেনা। এছাড়া জার্মানিতে ৩৩ হাজার ৯০০ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৬ হাজার ৪০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। ইউরোপে অসংখ্য ঘাঁটির সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন আছে। এর মধ্যে জার্মানিতে সর্বোচ্চ ৩৩ হাজার ৯০০ সেনা রয়েছে। ইতালিতে রয়েছে ১২ হাজার ৩০০ ও ব্রিটেনে ৯ হাজার ৩০০।

 সুত্র-যুগান্তর অনলাইন