এশিয়ার যেসব দেশের পর্যাপ্ত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ নিশ্চিত করার সামর্থ্য কম, এ শীতে সেসব দেশে বিদ্যুতের ভয়াবহ ঘাটতি তৈরির ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে দেশগুলো বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। জ্বালানি পণ্যের বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান রাইস্ট্যাড এমন উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক কৌশল রমেশ বলেন, চলতি গ্রীষ্মে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। এর ফলে ইউরোপের দেশগুলো চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর পরও এলএনজি আমদানিতে ইউরোপের কারণে সংকটের মুখে পড়বে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে ইউরোপ অন্যান্য দেশ থেকে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিতে জোর প্রয়াস চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বাজার ধরে রাখা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ইউরোপে গ্যাসের বাজার চড়া। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কার্গোগুলোকে আকৃষ্ট করতে এশিয়ার স্পট মার্কেটেও ঊর্ধ্বমুখী দামেই এলএনজি কেনাবেচা হচ্ছে। এর অর্থ হলো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মতো সেসব দেশ প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি ৫০ ডলারের কাছাকাছি দামে কিনতে অক্ষম, তারা বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানিটির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে না। শুধু তা-ই নয়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও কয়লার ক্ষেত্রেও একই রকম প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। এর ফলে শীত মৌসুমে এশিয়ার অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

রাইস্ট্যাডের দেয়া তথ্য বলছে, গত জুনের পর থেকে দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগহীন থাকছে পাকিস্তান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশটির সরকার সারে বরাদ্দকৃত ভর্তুকি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় স্থানান্তর করেছে। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংকটের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করা হলেও তা খাদ্য সংকটের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে বৈদেশিক রিজার্ভ সংকটের কারণে পাকিস্তান ভয়াবহ জ্বালানি সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এর ফলে দেশটির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৌশল রমেশ। পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে গত মাসের শুরুতে বাংলাদেশও একই রকম বিদ্যুৎ সংকটের মুখে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বাণিজ্যিক ভবনগুলোয় বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করার পাশাপাশি কর্মঘণ্টাও কমিয়েছে। কমানো হয়েছে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার সময়সীমাও। পরিবহন খাতে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে গ্যাস। দিনে কয়েক ঘণ্টা সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোয় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে।

এদিকে রাশিয়ার জ্বালানি জায়ান্ট গ্যাজপ্রমের মার্কেটিং ও ট্রেডিং ইউনিট ভারতে চুক্তিভিত্তিক সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করেছে। এর ফলে সতর্ক বার্তা দিয়েছে ভারতের রাষ্ট্র মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম কোম্পানি গেইল। প্রতি বছর ২৫ লাখ টন চুক্তির আওতায় সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের এলএনজি আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমেছে। বছর শেষে দেশটির মোট আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬ কোটি ৭০ লাখ টনে। এর ফলে দেশটি জাপানের কাছে শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক দেশের তকমা হারাতে পারে। 

রমেশের মতে, উত্তর-পূর্ব এশিয়ার ক্রেতারা খুব সতর্কভাবে ইউরোপের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আর সে অনুযায়ী আসন্ন শীতে স্বল্পমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

থাইল্যান্ডে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে দেশটির ইরওয়ান গ্যাসক্ষেত্র সবচেয়ে বড় সংকটে। এর ফলে দেশটি আমদানি সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া নভেম্বরের মধ্যেই মজুদ ৯০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে জাপান আগে থেকেই আসন্ন শীতে বিদ্যুতের ভারসাম্য নিয়ে সন্দিহান ছিল। ফলে দেশটি পরিস্থিতিমাফিক আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে।

বণিক বার্তা ডেস্ক