Print
Hits: 507

জুলাই ও আগস্ট—বর্ষপঞ্জির হিসেবে এই দুমাস বাংলাদেশে বর্ষকাল। অথচ বর্ষাকালের বেশিরভাগ সময়ই ছিল বৃষ্টি জন্য হাহাকার! আষাঢ়ে দেখা ছিল না বৃষ্টির, শ্রাবণের ধারাও বইলো না! আবহাওয়া অধিদফতরের হিসেবে, চলতি বছরের বর্ষাকালে গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

বাংলাদেশে সাধারণত জুলাইয়ে গড়ে প্রায় ৫শ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এ বছর হয়েছে মাত্র ২১১ মিলিমিটার। আর আগস্টেও হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০শতাংশ কম। সবচেয়ে নজিরবিহীন বিষয় হলো, বর্ষার দুমাসের মধ্যে অন্তত পনের দিন দেশের কোনো না কোনো জায়গায় দাবদাহের মতো পরিস্থিতি দেখা গেছে।

আবহাওয়াবিদদের মতে , এবার বাংলাদেশে জুলাইয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৭ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে; যা গত ৪৬ বছরের মধ্যে হয়নি। আর আগস্টে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম এবং গত প্রায় ২৩/২৪ বছরের মধ্যে অগাস্ট মাসে আর এত কম বৃষ্টি হয়নি।

চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল। তাই দিনের পাশাপাশি রাতেও যথেষ্ট গরম অনুভূত হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে আবহাওয়ার এমন আচরণের জন্য মৌসুমি বায়ুর খেয়ালি আচরণকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে এবার আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যাচ্ছে বছরের শুরু থেকেই। ফেব্রুয়ারিতে শীতের প্রকোপ কমতে না কমতেই দুই দফা ঝড় বৃষ্টি হয়েছিলো দেশের নানা জায়গায়।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলছেন যে বাংলাদেশে বর্ষাকালে প্রথমে লঘুচাপ হয় এবং এরপর সেটি মৌসুমি নিম্নচাপে রূপ নেয় ও এর প্রভাবে বৃষ্টি হয়। গত মাস ও এ মাসে অনেকগুলো লঘুচাপ হয়েছে কিন্তু এগুলো দ্রুত বাংলাদেশের ওপরে আসতে পারেনি।

তিনি জানান, পরপর যে কয়েকটি নিম্নচাপ হয়েছে, সেগুলোর কারণে উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে পাকিস্তানে পর্যন্ত পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। গত সপ্তাহের আগেও পাকিস্তানে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ যে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে জুলাই ও অগাস্টে বাংলাদেশে ব্যাপক বৃষ্টি হয় সেটি বাংলাদেশে না এসে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণ হয়েছে পাকিস্তানে। এর ফলে বাংলাদেশে বৃষ্টির পানির অভাবে চাষাবাদে সংকট তৈরি হলেও উল্টো পাকিস্তানে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ভয়াবহ বন্যায় মারা গেছে হাজারেরও বেশি মানুষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলছিলেন বৈশ্বিক উষ্ণতা ও তাপমাত্রা পরিবর্তন এর সাথে জড়িত এবং এর ফলে আবহাওয়ার যত দিক আছে সব কিছুতেই এর প্রভাব পড়ছে।

সব মিলিয়ে এ বছর বাড়তি তাপমাত্রা, কম বৃষ্টিপাত ও দাবদাহের ক্ষেত্রে রেকর্ড হলো বাংলাদেশে । বিশেষজ্ঞরা বলছেন আবহাওয়ার এমন আচরণ সামনে আরও মোকাবেলা করতে হবে বলেই ধারণা করছেন তারা।

সুত্র-ডেইলি বাংলাদেশ