শিক্ষা সর্বপ্রথম কার কাছ থেকে পেয়েছেন মনে পড়ে? নিশ্চয়ই মা-বাবার কাছ থেকে। মা-বাবাই হলেন প্রথম শিক্ষক। এরপর শিশু স্কুলে যায়। প্রাথমিক শিক্ষা দেয় কিন্তু মা-বাবা। মা-বাবা কী শেখাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে তৈরি হয় শিশুর ব্যক্তিত্ব। মৌলিক শিক্ষাগুলো মায়ের কাছ থেকেই পাচ্ছে সবাই। মানসিকতা তৈরি হওয়ার প্রথম কর্ণধার হলেন মা।

প্রত্যেক সন্তান বেড়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান থাকে তার বাবা-মায়ের। তবে বেড়ে ওঠার সময় আপনার বাবা-মা কি খুব কঠোর ছিলেন? তারা কি আপনাকে ঘর পরিষ্কার করতে, বাড়ির কাজ করতে এবং প্রতিনিয়ত ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে বলতেন? আমরা অনেকেই (যদিও সবাই না) এমন পরিবারে বড় হয়েছি যেখানে মায়েরা ছিলেন আমাদের চির শত্রু।

নিত্যদিন পেছনে লেগে থাকা এবং বলে বলে কাজ করানোর জন্য হয়তো আপনার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আপনি কি জানেন? গবেষকদের মতে, কঠোর মায়েদের সন্তানেরাই ভবিষ্যতে সফলতার মুকুট পরিধান করতে সমর্থ হয়? অসহ্য মনে হলেও ভবিষ্যৎ এ আপনি আপনার মা’কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে শেষ করতে পারবেন না। এটাই সত্যি!

গবেষণাটি কিন্তু সম্প্রতি হয়েছে এমনটা নয়। তবে এটাই চির সত্যি যে, কঠোর মায়েদের সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়। শক্ত ও রাগী মায়েদের সন্তানেরা দ্রুত গ্র্যাজুয়েট হতে পেরেছে এবং ভালো চাকরিও পেয়েছে। এটা শুনতে অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর মনে হতে পারে কিন্তু ঘটনা সত্য!

২০০৪ থেকে ২০১০ সালের ভেতর ১৫ হাজারের চেয়ে বেশি বাচ্চাদের যাদের বয়সসীমা ১৩-১৪ বছর ছিল তাদের ওপর ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণা চালায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দলের অধ্যাপক এরিকা র‌্যাসকন জানিয়েছেন, কঠোর মায়েদের সন্তানের জীবন সাফল্যে পরিপূর্ণ- এটা প্রমাণিত এবং সেই মায়েরা সন্তানদের শৈশবে শাসন করেছিলেন।

র‌্যাসকনের মতে, শৈশব থেকেই সন্তানের পড়াশোনার ব্যাপারে বাবা-মার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বাস তাদেরকে খ্যাতির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আমাদের গবেষণা এটিই প্রমাণ করেছে।

এসব বাচ্চার মায়েদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল তারা বর্তমানে অধিক আত্মবিশ্বাসী ও নিরাপদ। গবেষণায় এটিও প্রমাণিত হয়, যে মেয়েদের মায়েরা অতিরিক্ত কঠোর ছিলেন তাদের মধ্যে অল্প বয়সে মা হবার প্রবণতা শতকরা চার ভাগ কম।

অনেক বাচ্চারাই তাদের মায়েদের যমের মতো ভয় পান। কিন্তু কঠোর মায়েদের কড়া শাসন পরবর্তী জীবনে বেশ সাহায্য করবে আপনাকে। বড় হবার পর মাকে বারবার ধন্যবাদ জানাবেন সাফল্যপূর্ণ একটি জীবনের জন্যে। শুধু তাই নয়, সে শিক্ষায় আপনি আপনার সন্তানকেও শিক্ষিত করতে চাইবেন।

সময় থাকতে মা-বাবাকে মূল্য দিতে হবে। মায়ের শাসনকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ আর বাবাকে সম্মান দেখাতে হবে। তাদের চেয়ে আপন কেউ এ দুনিয়ায় নেই।