১৮৬১ সাল থেকে শুরু করে প্রায় চার বছর ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে শুধু লবণের কারণে। অবাস্তব হওয়ার মত হলেও এটাই সত্যি। সে সময় যুদ্ধের দুটি নাম ছিল। একটি ইউনিয়ন এবং আরেকটি ফেডারেল। ইউনিয়নের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই গৃহযুদ্ধ চলাকালীন লক্ষ্য করেন, সেনাবাহিনীর বলে শুধু নয়, জিতার জন্য অন্য পথ অবলম্বন করতে হবে।

জানা গেছে, লবণের ওপর নির্ভর ছিল শত্রু পক্ষের সেনাদের জীবন। কারণ তারা যুদ্ধ চলাকালীন মাংস থেকে শুরু করে অন্য খাবার সঞ্চয় করে রাখতো। এই বিপুল পরিমাণ খাবার সঞ্চয় করার জন্য প্রয়োজন ছিল লবণের। বরফের বদলে তখন লবণ ব্যবহার করেই খাবার সংরক্ষণ করে রাখা হত।

ইউনিয়নের কর্মকর্তারা ভাবলেন, যদি কোনো ভাবে লবণের অভাব তৈরি করা যায়, তবে দক্ষিণের সেনাবাহিনীর ওপর এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। সাউথ ক্যারোলিনা, ভার্জিনিয়া, ফ্লোরিডা, আলাবামা, লুইজিয়ানা, টেক্সাস এবং দক্ষিণের আরও কয়েকটি জায়গায় লবণের প্রাচুর্য ছিল। এখানকার লবণের খনি থেকেই সেনারা লবণ সংগ্রহ করত। ইউনিয়নের নেতারা ভাবলেন যদি এই খনিগুলো ধ্বংস করা যায়, তাহলে সেনাবাহিনী লবণের অভাবে খাদ্য স়ঞ্চয় করে রাখতে পারবে না। ফলে এক জায়গায় বেশি দিন থাকাও তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

সেই ভাবনা থেকে শুরু হয় কাজ। শুধু লবণের ব্যবসাতেই নয়, তুলা, ময়দা ও কফির ব্যবসাতেও এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের রাজ্যগুলো। গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এই জিনিসগুলোর উৎপাদনে বাধা দেওয়া শুরু হয়। লবণের খনিগুলো একে একে ধ্বংস করতে থাকে ইউনিয়ন। এর ফলে বাজারে লবণের অভাব দেখা দেয়। যুদ্ধের সময় ২০০ পাউন্ড ওজনের লবণের দাম ৫০ সেন্ট থাকলেও বছর ঘুরতেই সমপরিমাণ লবণের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ২৫ ডলারে! পেশা বিশেষে লবণের দাম আরও বদলাতে থাকে। সাধারণ পরিবারের কেউ চার গ্যালন লবণ কিনতে চাইলে তাদের আড়াই ডলার দিতে হতো। 

সে সময় কোনো বিধবা মহিলার ছেলে সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকলে তার সমপরিমাণে লবণ কিনতে চাইলে তার লাগতো এক ডলার। আবার কোনো বিধবার স্বামী সেনাবাহিনীতে থাকলে তাকে চার গ্যালন লবণ বিনামূল্যে দেওয়া হত। ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ভার্জিনিয়ার লবণ খনিগুলো ধ্বংস করার সঙ্গে সঙ্গে ইউনিয়ন নিজেদের এলাকায় লবণ উৎপাদনে তৎপর হয়ে ওঠে। লবণের অভাব দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দাম বেড়ে যাওয়ায় সেনাদের পক্ষে আর খাবার জমিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এই ভাবে শুধু লবণ-শক্তিতে ভর করে বিপক্ষ সেনাদের দুর্বল করে দিয়েছিল ইউনিয়ন।

লবণ উৎপাদনের প্রধান খনি ছিল লুইজিয়ানার আভেরি দ্বীপপুঞ্জে। ওই খনি ধ্বংস করে দেওয়ায় খনির ম্যানেজার এডমান্ড ম্যাকলেনি ওই জমিতে মরিচের চাষ করতে শুরু করেন। ১৮৬৮ সাল থেকে এই আভেরি দ্বীপপুঞ্জ আর লবণের জন্য নয়, বরং টাবাস্কো হট সস উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।