হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে মাথা ঝিমঝিম। তারপর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছেন এক বৃদ্ধা। কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেছেন, তার স্বামী নাকি সদ্য অবসর নিয়েছেন, আর সে জন্যই তার শরীরে দেখা দিয়েছে এমন অসুস্থতা।

খবরে বলা হয়, রিটায়ার্ড হাজব্যান্ড সিনড্রোম, অর্থাৎ স্বামী চাকরি থেকে অবসর নিলে এই রোগে আক্রান্ত হবেন স্ত্রীরা। তার মানে স্বামীর কাজে অবসরপ্রাপ্তি, স্ত্রীর অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে সম্ভব এটি সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন চিকিৎসরা।

মাথাব্যথা থেকে শুরু করে নানা শারীরিক অস্বস্তি নিয়ে এক নারী হাজির হন চিকিৎসকের কাছে। বেশকিছু পরীক্ষা করার পর চিকিৎসক তাকে আচমকাই প্রশ্ন করে বসেন, তার স্বামী সদ্য অবসর নিয়েছেন কি না? উত্তরে সম্মতি জানান সেই নারী। কিন্তু চিকিৎসকের এমন প্রশ্নকে স্বাভাবিকভাবেই বেশ অবান্তর বলে মনে হয় তার। তখন চিকিৎসক জানান, এই নারীর মতো সমস্যা নিয়ে অনেকেই তার কাছে এসেছেন।

প্রত্যেকের শরীরে এমন অদ্ভুত অস্বস্তি তৈরি হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাননি ওই চিকিৎসক। কিন্তু প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই একটি বিষয় অদ্ভুতভাবে মিলে গেছে। সেটা হলো এসব নারীদের স্বামী নাকি সদ্য অবসর নিয়েছেন। তারপরই সেই চিকিৎসক বুঝতে পারেন এই নারীর শরীরেও ‘রিটায়ার্ড হাজব্যান্ড সিনড্রোম’ দেখা দিয়েছে।

ইতোমধ্যে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রোগ। বিশেষ করে যারা এতোদিন একাই সন্তানপালন থেকে ঘরের যাবতীয় কাজ দেখাশোনা করে এসেছেন, তাদের স্বামীরা অবসর নিলেই স্ত্রীদের শুরু হচ্ছে এমন সমস্যা।

সর্বপ্রথম জাপানের এক চিকিৎসক এই রোগের অস্তিত্ব টের পান। মধ্যবয়সী নারীরা বেশিরভাগই এমন সমস্যা নিয়ে প্রায়ই তার কাছে আসতেন।

একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, জাপানে ৪৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই বিবাহের ২০ বছর পর বা তারওপরে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটেছে। শুনতে অবাক লাগলেও এর কারণ হিসেবেও রিটায়ার্ড হাজব্যান্ড সিনড্রোমকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু কেন হয় এমন অদ্ভুত রোগ, তার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা চিকিৎসাশাস্ত্রে নেই। তবে অনেকেই এ ধরনের রোগকে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন বলে মনে করেন।

দীর্ঘদিন ধরে একই রুটিনে জীবনযাপন করার ফলে খুব সহজে সেই অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন না স্ত্রীরা। তাই অবসরগ্রহণের পর যখন স্বামী সারা দিন ঘরে থাকেন, তখন তাকে প্রায় অপরিচিত বলেই মনে হয় তাদের। আর একজন অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সারাক্ষণ থাকতে তো সমস্যা হবেই।

প্রাথমিকভাবে মারাত্মক কোনো ক্ষতি না হলেও এর ফলে দেখা দিতে পারে ক্রনিক ডিপ্রেশন। যার থেকে দানা বাঁধতে পারে নানান মনস্তাত্ত্বিক রোগ। আর সেটাই বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্তও গড়াতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।