শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন বর্তমান সমাজে যেন ব্যাধির আকার নিয়েছে। প্রায়ই শিরোনামে চলে আসে এ ধরনের ঘটনা। শুধুমাত্র কন্যা সন্তান নয়। পুত্রসন্তানও হতে পারে নির্যাতনের শিকার। অবশ্যই মানসিকতার বদল প্রয়োজন। একই সঙ্গে শিশুকেও প্রথম থেকেই শিক্ষিত করে তোলা প্রয়োজন। আর এই দায়িত্ব প্রাথমিক ভাবে মা হিসেবে আপনাকেই নিতে হবে। ছোট থেকেই গুড টাচ-ব্যাড টাচের (good touch bad touch) পার্থক্য শিশুকে (child) বুঝিয়ে দিন। শিক্ষাটা শুরু হোক বাড়ি থেকেই। কীভাবে কঠিন এই বিষয়টা সহজ করে বোঝাতে পারেন? আমরা কিছু সাজেশন দেওয়ার চেষ্টা করলাম। দেখুন তো, আপনার কাজে লাগতেও পারে। 

 

১) খেলার মাধ্যমে বোঝান

গুড অ্যান্ড ব্যাড টাচ বোঝানোটা খুব সহজ নয়। ফলে শিশুর যেটা ভাল লাগে, যে কাজটা করতে সে পছন্দ করে, তার মাধ্যমে বোঝাতে পারলে আপনার কাজটা সহজ হবে। ধরুন, শিশুর সঙ্গে আপনি লুকোচুরি খেলছেন। যতবার তাকে আপনি ধরে ফেলছেন, জড়িয়ে ধরুন। কয়েকবার এটা করার পর জানতে চান, জড়িয়ে ধরলে শিশুর কেমন লাগছে? সাধারণত বেশিরভাগ শিশু উত্তর দেবে, ভাল লাগছে। তখন তাকে বোঝাতে পারেন, মা যখন জড়িয়ে ধরছে, সেটা সে এনজয় করছে, তার ভাল লাগছে। অর্থাৎ, এটা গুড টাচ। আর যখন অন্য যে কারও জড়িয়ে ধরা সে এনজয় করবে না, তার ভাল লাগবে না, সেটা ব্যাড টাচ।  

২) প্রাইভেট পার্ট সম্পর্কে সচেতন করুন

বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ বলেন, বছরপাঁচেকের মধ্যেই শিশুদের প্রাইভেট পার্ট (private part) সম্পর্কে সচেতন করুন। সুসু বা পটির মতো চলতি শব্দ ব্যবহার না করে, যে অঙ্গের মাধ্যমে এসব বর্জ্য পদার্থ বেরিয়ে যায়, সেটা যে তার প্রাইভেট পার্ট, সেটা বোঝান। ওই সব অঙ্গতে হাত দিয়ে কখনও আদর করবেন না। এমনকী, কেউ যে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে প্রাইভেট পার্টে হাত দিতে পারে না, সেটা শিশুকে দু’-পাঁচ বছর বয়স হলেই বোঝাতে থাকুন। 

৩) অনুমতি নিন

স্নান করিয়ে দেওয়া বা জামা পরিয়ে দেওয়ার সময় আপনি যখন শিশুর প্রাইভেট পার্টে হাত দেবেন, তখন ওর অনুমতি নিন। এতে শিশু শিখবে, অনুমতি ছাড়া কেউ, এমনকী, মা-ও ওর প্রাইভেট পার্টে হাত দিতে পারে না।

৪) শরীর হল সম্পদ

শিশুর চার, পাঁচ বছর বয়স হলেই সে তার সমস্ত অঙ্গ আলাদা করে চিনতে পারে। প্রত্যেকটি অঙ্গের কাজ আলাদা করে বুঝিয়ে দিন। শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ, অর্থাৎ গোটা শরীরটাই যে তার সম্পদ, এর মালিক একমাত্র সে, এই বোধটা তৈরি করুন। ধরুন, আপনার বাড়িতে যেমন আপনার অনুমতি ছাড়া কেউ ঢুকতে পারবে না, তেমনই শিশুকে বোঝান, শরীর উপর বাড়ি। সেখানে ওর অনুমতি ছাড়া কেউ হাত দিতে পারবে না। 

৫) সহজ ভাবে কথা বলুন

গুড টাচ, ব্যাড টাচ বোঝাতে গিয়ে শিশুর সঙ্গে গম্ভীর আলোচনা শুরু করবেন না। তা হলে বিষয়টা ওদের কাছে ভয়ের হবে। ইনফ্যাক্ট, এই বিষয়টা নিয়ে আলাদা করে আলোচনায় বসবেন না। দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই সহজ কথায় বুঝিয়ে বলুন। 

৬) চিৎকার করতে শেখান

একদম ছোট থেকে শিশুকে বোঝান, যে-কোনও পরিস্থিতিতে, যে কোনও মানুষের স্পর্শ তার ভাল না লাগলে যেন সে সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে। সেই মানুষ তার অত্যন্ত পরিচিত, ঘনিষ্ঠ হতে পারে। পরিবারের কেউ হতে পারে। যার সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হয়, তেমন কেউ হতে পারেন। আবার একেবারে অপরিচিতও কেউ হতে পারেন। যে-কোনও পরিস্থিতিতে স্পর্শ পছন্দ না হলে যেন চিৎকার করে প্রতিবাদ করে।

৭) শিশুর ভরসা হয়ে উঠুন

গুড টাচ হোক বা ব্যাড, যে-কোনও রকম স্পর্শের ভাল লাগা বা খারাপ লাগাটুকু শিশু যেন আপনার সঙ্গে শেয়ার করে সে বিষয়ে নিশ্চিত হোন। শিশুকে বোঝান, আপনি ওর ভরসা, বিশ্বাসের জায়গা। তাই যে কোনও মনখারাপ, খারাপ লাগা সে যেন কোনও কিছু না ভেবে আপনাকে বলতে পারে। স্কুলে এমন কোনও ঘটনা ঘটলে জানাতে বলুন শিক্ষকদের। যদি তাতে শিশু স্বচ্ছন্দ না হয়, আপনার জানাটা মাস্ট। সর্বোপরি শিশুকে বিশ্বাস করুন। কারণ, গবেষণা বলছে, গুড টাচ-ব্যাড টাচ সংক্রান্ত বিষয়ে শিশু মিথ্যে বলছে, এই উদাহরণ ব্যতিক্রম।