প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা, যার মধ্য দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে তীব্র ভয়ের অনুভূতি শারীরিক বিভিন্ন ধরনের জটিলতাকে উসকে দেয়। তখন বাস্তবে হয়তো বিপদের কোনো কারণই নেই। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই ভীষণ ভয়ে কুঁকড়ে যায় মানুষ। যখন কেউ প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হয়, তখন সে নিজের ওপরে একেবারে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ফলে ভয়ের মাত্রা বেশি হয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, এমনকি রোগী মারাও যেতে পারে। মানুষের জীবনে এ ধরনের ভয়ের অনুভূতি একবার-দুবার হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যাপারটি যদি অপ্রত্যাশিতভাবে বারবার ঘটতে থাকে এবং কোনো কারণ ছাড়া দীর্ঘক্ষণ সেই ভয়ের অনুভূতি রয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে এটা আর স্বাভাবিক হিসেবে দেখার উপায় নেই।

প্যানিক অ্যাটাকের মুহুর্মুহু এই চলমান পরিস্থিতিকে বলা হয় প্যানিক ডিসঅর্ডার। প্যানিক অ্যাটাকে কিছু বিশেষ পরিস্থিতি বা মুহূর্তে শরীরে এমন সব লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা মূলত মানসিক সমস্যা থেকে তৈরি হয়। কিন্তু লক্ষণ দেখে শারীরিক সমস্যা বলেই মনে হবে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা দ্বিগুণ। মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিক উপাদান যেমন সেরোটোনিন, নরএপিনেফ্রিন, গামা অ্যামিনো বিউটাইরিক অ্যাসিড (গাবা) ইত্যাদির স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া এবং ভয় নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থান যেমন অ্যামিগডালা, হাইপোথ্যালামাস, হিপপোক্যাম্পাস, প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স ইত্যাদির কাজের ত্রুটির জন্য এটি হয়ে থাকে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এটি সাধারণত ৩০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না। এটি ঘুমের মধ্যেও হতে পারে আবার জেগে থাকা অবস্থাতেও হতে পারে।

কারণ

প্যানিক অ্যাটাক বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন : জেনেটিক, মেজর স্ট্রেস বা তীব্র মানসিক যন্ত্রণা, খুব কাছের কাউকে হারানোর ভয়, আর্থিক বা ব্যবসায়িক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কিংবা কারও মাধ্যমে অপমানিত হওয়া ইত্যাদি কারণে প্যানিক অ্যাটাক হয়।

লক্ষণ

প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ বুঝতে পারবেন, যখন দেখবেন হঠাৎ করে বেশি পরিমাণে ঘাম হচ্ছে, বুকে ব্যথা করছে, মাথা ঘুরছে, বমি বমি ভাব হচ্ছে, অনিয়ন্ত্রিত হৃৎস্পন্দন, শরীর ঠা-া হয়ে আসা, দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মনে হওয়া কিংবা শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

প্যানিক ডিসঅর্ডার নিরাময়যোগ্য সমস্যা। প্যানিক ডিসঅর্ডার সফলভাবে নিরাময়ের জন্য সাইকোথেরাপি ও ওষুধ উভয়ই একসঙ্গে বা আলাদা আলাদা ব্যবহার করা হয়। এই রোগের সঙ্গে হৃদরোগ বা কার্ডিওভাসকুলার ডিসঅর্ডারের মিল পাওয়া যায়। লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের মতো মনে হয়। তাই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শের মাধ্যমে এটি মানসিক সমস্যা নাকি হার্টের সমস্যা তা আলাদা করা জরুরি। সঠিক ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। হঠাৎ এমন হলে আতঙ্কিত না হয়ে রোগীকে বা নিজেকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া, নিজেকে শান্ত করা, দুশ্চিন্তামুক্ত করা, প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। চিকিৎসক প্রয়োজনে সাইকিয়াট্রিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের কাছে রেফার করতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদি ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া করা যায়।

 সুত্র-দেশ রুপান্তর