প্রাকৃতিক শক্তিতে ভরপুর এই বিশেষ চা-টি শুধু আপনার রসনা তৃপ্তি করবে না, সেই সঙ্গে শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতেও নানাদিক থেকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে যাবে। তাই তো বলি আর অপেক্ষা নয়, আজই বাজার থেকে লবঙ্গ কিনে এনে বানিয়ে ফেলুন এই হার্বাল চাটি। আর চেখে দেখুন কেমন লাগে! আসলে লবঙ্গের শরীরে উপস্থিত ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন কে, ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।

তবে চা কিন্তু অনেক ভাবেই খাওয়া যায়। যেমন- দুধ চা, রং চা, লেবু চা, আদা চা, তুলসি পাতা চা। তবে নানান রকমের চায়ের কথা জানলেও লবঙ্গ চায়ের কথা মোটামুটি অনেকেরই অজানা। এই লবঙ্গ চায়ের নানা গুণের কথাও আমাদের অজানা। গবেষকরা বলছেন, আপনার বয়স যদি ২৫ থেকে ৪০ এর মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে প্রতিদিন আপনাকে লবঙ্গ চা খেতেই হবে। তাছাড়া লবঙ্গ চাতে রয়েছে অনেক রোগের মুক্তি। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক লবঙ্গ চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে- 

লবঙ্গ চা যেভাবে বানাবেন 
প্রথমে পরিমাণ মতো লবঙ্গ নিয়ে বেঁটে নিন। তারপর সেই লবঙ্গের গুঁড়া এক কাপ পানিতে মিশিয়ে কম করে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। যখন দেখবেন পানিটা ফুটতে শুরু করেছে, তখন তাতে হাফ চামচ চা পাতা দিন। আর কিছু সময় অপেক্ষা করে পানিটা ছেঁকে নিলেই হয়ে গেলো লবঙ্গ চা।

চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে যারা চর্চা করেন তাদের মতে, প্রতিদিন দুবার করে লবঙ্গ চা খেলে শরীরে প্রবেশ করে ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন কে, ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম সহ আরও একাধিক উপকারী উপাদান। যা নানাভাবে আমদের শরীরের উপকারে লেগে থাকে।

ক্যান্সার দূরে থাকে
লবঙ্গের ভেতরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ক্যান্সার এজেন্ট। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে লবঙ্গ চা জায়গা করে নিলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের ভেতরে ক্যান্সার নিরোধক উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে দেহে ক্যান্সার সেল জন্ম নেয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে
সরকারি এবং বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক দশকে আমাদের দেশে যে হারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, তাতে আমাদের দেশ সারা বিশ্বের মধ্যে ডায়াবেটিস ক্যাপিটালে পরিণত হয়েছে। আর সবথেকে ভয়ের বিষয় হলো প্রতি বছর নতুন করে এই মারণ রোগে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৪০ এর নিচে। এমন পরিস্থিতি থেকে যুব সমাজকে সুস্থ রাখতে পারে একমাত্র লবঙ্গ চা। কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ চায়ের ভেতরে উপস্থিত নিগেরিয়াসিন, যা শরীরে প্রবেশ করার পর ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাকে এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সুযোগই পায় না। 

স্ট্রেস লেভেল নিমেষে কমে যায়
ডায়াবেটিসের পর যে সমস্যাটা গত কয়েক বছরে বেশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তা হল স্ট্রেস। পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশের যুব সমাজের সিংহভাগই স্ট্রেসের শিকার। আর ভয়ের বিষয় হচ্ছে- যে কয়টা মারণ রোগ এখন পৃথিবীতে দাপাদাপি করছে, তার প্রায় সবগুলোর সঙ্গেই স্ট্রেসের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই এমন মারণ পরিস্থিতির খপ্পরে পরতে যদি না চান, তাহলে প্রতিদিন লবঙ্গ চা খেতে ভুলবেন না। কারণ এই পানীয়টির ভেতরে উপস্থিত নানাবিধ উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ‘ফিল গুড’ হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে স্ট্রেস লেভেল কমতে একেবারে সময় লাগে না।

চটজলদি আর্থ্রাইটিসের যন্ত্রণা কমে
লবঙ্গে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ হাড়ের রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে এক কাপ লবঙ্গ চা বানিয়ে কয়েক ঘন্টা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। তারপর সেই ঠাণ্ডা চা ব্যথা জায়গায় কম করে ২০ মিনিট লাগালে দেখবেন যন্ত্রণা একেবারে কমে গেছে। 

জ্বরের চিকিৎসায় কাজে আসে
লবঙ্গে থাকা ভিটামিন কে এবং ই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে দেয় যে, শরীরে উপস্থিত ভাইরাসেরা সব মরে যায়। ফলে ভাইরাল ফিবারের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। 

দাঁতের ব্যথা কমে যায়
লবঙ্গতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু বিক্রিয়া করে যে নিমেষে দাঁতের যন্ত্রণা কমে যায়। তাই এবার থেকে দাঁতে অস্বস্তি বা মাড়ি ফোলার মতো ঘটনা ঘটলে এক কাপ গরম লবঙ্গ চা খেয়ে নেবেন। দেখবেন উপকার পাবেন।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
লাঞ্চ বা ডিনারের আগে লবঙ্গ দিয়ে বানানো এক কাপ গরম গরম চা খেলে হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে পেটের দিকে রক্ত প্রবাহেরও উন্নতি ঘটে। ফলে খাবার হজম হতে সময় লাগে না। তাই যাদের কম ঝাল-মশলা দেয়া খাবার খেলেও বদ-হজম হয়, তারা লবঙ্গ চা পান করে একবার দেখতে পারেন। এমনটা করলে উপকার যে মিলবে, তা হলফ করে বলতে পারি।

নিমেষে করবে সংক্রমণের চিকিৎসা
এবার থেকে কোনো ধরনের ত্বকের সংক্রমণ হলেই চোখ বুজে ক্ষতস্থানে লবঙ্গ চা লাগাতে ভুলবেন না। এমনটা করলে দেখবেন কষ্ট কমতে সময়ই লাগবে না। আসলে লবঙ্গে উপস্থিত ভোলাটাইল অয়েল শরীরে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। সেই সঙ্গে জীবাণুদেরও মেরে ফেলে। ফলে সংক্রমণজনিত কষ্ট কমতে একেবারেই সময় লাগে না।