Print
Hits: 15566

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর দ্বীপটিকে শায়েস্তা করতে উঠে পড়ে লেগেছে চীন। তাইওয়ান থেকে আমদানিতে নানা ধরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিজেদের মোট রপ্তানির ৩০ ভাগই চীনে পাঠায় তাইওয়ান। তাই চীনের যে কোনো নিষেধাজ্ঞাই বড় প্রভাব ফেলে দেশটির উপরে। চীনও দফায় দফায় তাইওয়ানের একের পর এক পণ্যের উপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে। কিন্তু তাইওয়ানের সবথেকে মূল্যবান রপ্তানি সেমিকন্ডাক্টরের উপরে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি চীন। আর এখানেই তাইওয়ানের কাছে ধরা চীন।

মূলত সেমিকন্ডাক্টরের কারণেই বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তাইওয়ান। চীন নিজেও তাইওয়ানের উপরে নির্ভরশীল। দেশটি তাইওয়ানের উপর থেকে এই নির্ভরশীলতা দূর করতে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে নিকট ভবিষ্যতে এই নির্ভরশীলতা যাচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টরের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য চলে তাইওয়ানের।

স্মার্টফোন থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান, সব জায়গায় দরকার পড়ে এই সেমিকন্ডাক্টর। বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টরের যে বাজার তার ৬৪ শতাংশই তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণে। শুধুমাত্র তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কো বা টিএসএমসি বিশ্বের অর্ধেকের বেশি সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করে। এরপরেই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। তারা তৈরি করতে পারে মাত্র এক পঞ্চমাংশ। তাও আবার সর্বাধুনিক সেমিকন্ডাক্টরের বাজারে তাইওয়ান একাই সরবরাহ করে ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ তাইওয়ানকে ছাড়া চীনসহ গোটা বিশ্বই অচল।

তাইওয়ানকে মাত্র ১৩টি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু এর উপরে নির্ভর করে গোটা দুনিয়া। শুধু অর্থনীতিই নয়, তাইওয়ানের নিরাপত্তায়ও বড় ভূমিকা রাখে এই সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি। দেশটির রপ্তানির ৪০ শতাংশই আসে সেমিকন্ডাক্টর থেকে, জিডিপিরও ১৫ শতাংশ নির্ভর করে এর উপর। এই সেমিকন্ডাক্টরের কারণেই কৌশলগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর কাছে তাইওয়ান গুরুত্বপূর্ণ। এর হাত ধরেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবে দেশটি। বেইজিং যদি এর উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে তাইওয়ান ক্ষতিগ্রস্থ হবে কিন্তু বেইজিং নিজেও নিজের অর্থনীতিতে ধস নামিয়ে আনবে। 

এরইমধ্যে এই ইন্ডাস্ট্রির পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। কিন্তু তারপরেও সেমিকন্ডাক্টরের বৈশ্বিক বাজারের মাত্র ১০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তার কাছে। তাছাড়া চীনে উৎপাদিত সেমিকন্ডাক্টর তাইওয়ানের মতো অত্যাধুনিক নয়। সম্প্রতি চীন ৭ ন্যানোমিটার চিপ তৈরি করেছে কিন্তু তারপরেও একে ধরে নেয়া হচ্ছে প্রাথমিক ধাপ। টিএসএমসি কিংবা স্যামসাং এর থেকে অনেক এগিয়ে আছে। তাই শত্রু দেশ থেকে নানা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও, সেমিকন্ডাক্টরকে এড়িয়ে গিয়েছে দেশটি। 

তবে নিজেদের এই নির্ভরশীলতা কাটাতে উঠে পড়ে লেগেছে চীন। সেমিকন্ডাক্টরের বাজারে তাইওয়ান কতদিন রাজা হয়ে থাকতে পারবে তা অনিশ্চিত। এই নির্ভরশীলতাকে বড় বিপদ বলে আখ্যায়িত করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি তাই যত দ্রুত সম্ভব চীনের এই নির্ভরশীলতা দূর করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া গ্রহণ করা হয়েছে ‘মেড ইন চায়না’ উদ্যোগ। এর অধীনে হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিতে ৫ বছরে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়া প্রতি বছরই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ছে দেশটিতে। তবে এখনও আরও কয়েক বছর চীনকে অপেক্ষা করতে হবে তাইওয়ানের উপর থেকে নির্ভরশীলতা দূর করতে। ততদিন তাইওয়ানের কাছে অনেকটাই ধরা চীন।

মানবজমিন ডেস্ক

৪ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবার, ২:৪৪