বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল গ্রাহক কমেছে ২১ লাখ ৫০ হাজার। দেশে চারটি মোবাইল অপারেটরের মধ্যে টেলিটক বাদে সবারই গ্রাহক কমেছে এ সময়ে। এ ছাড়া মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকও ধারাবাহিকভাবে কমছে। মোবাইল অপারেটররা বলছে, ন্যূনতম রিচার্জের পরিমাণ বাড়ানো, গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা এবং গ্রাহকদের একাধিক সিম ব্যবহার কমিয়ে আনার কারণে এমনটা হয়েছে।

বিটিআরসির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসে মোবাইল গ্রাহক ছিলেন ১৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার (১৮৩.৫৮ মিলিয়ন)। সেপ্টেম্বরে তা কমে হয়েছে ১৮ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার (১৮১.৪৩ মিলিয়ন)। গত এক মাসে সরকারি অপারেটর টেলিটক বাদে বাকি তিন অপারেটরেরই গ্রাহক কমেছে। রবির গ্রাহক ৫ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার (৫৪.৯৫ মিলিয়ন) থেকে কমে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৬০ হাজার (৫৪.৩৬ মিলিয়ন) হয়েছে। বাংলালিংকের গ্রাহক ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৬০ হাজার (৩৮.৭৬ মিলিয়ন) থেকে কমে হয়েছে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪০ হাজার (৩৮.৩৪ মিলিয়ন)।

টেলিটকের গ্রাহক কিছুটা বেড়ে ৬৭ লাখ ২০ হাজার (৬.৭২ মিলিয়ন) থেকে বেড়ে ৬৭ লাখ ৮০ হাজার (৬.৭৮ মিলিয়ন) হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি গ্রাহক কমেছে দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের। জুন মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে তাদের গ্রাহক কমছে। জুন মাসে তাদের গ্রাহক ছিল ৮ কোটি ৪৮ লাখ (৮৪.৮০ মিলিয়ন)। সেখানে থেকে কমতে কমতে গত সেপ্টেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজারে (৮১.৯৫ মিলিয়ন)। সেবার মান নিয়ে গত ২৯ জুন গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় বিটিআরসি। এরপর গত সেপ্টেম্বরে এই অপারেটরকে পুরোনো সিম বিক্রির অনুমতি দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পরে ৬ নভেম্বর সে অনুমতিও প্রত্যাহার করা হয়। সেদিন বিটিআরসির চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন অনুষ্ঠানস্থলে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক ভালো ছিল না। এ ছাড়া তাদের সেবার মান নিয়ে আরও অভিযোগ ছিল। এই প্রেক্ষাপটে গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক কমে যাওয়া প্রসঙ্গে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে বলেছে, গ্রাহকের চাহিদার বিপরীতে গ্রামীণফোনের সিম না পাওয়ার কারণে টেলিকম খাতে এ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে যাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করে।

এদিকে দুই মাস ধরে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকও কমছে। জুলাই মাসে গ্রাহক ছিলেন ১১ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার (১১৬.১৪ মিলিয়ন), যা আগস্টে কমে হয় ১১ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার (১১৬.১২ মিলিয়ন)। সেখানে সেপ্টেম্বর মাসে তা আরও কমে হয় ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার (১১৪.৭৪ মিলিয়ন)।

দেশের অন্যতম শীর্ষ মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড জানিয়েছে, বাংলাদেশ ১৮ কোটি মোবাইল-সংযোগের বাজার হলেও সচল সংযোগ বা প্রকৃত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি। বাজার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিভিন্ন কারণে প্রতি মাসে অপারেটর ভেদে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ গ্রাহক এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে চলে যান অথবা ফেরত আসেন।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, চলতি অর্থবছরে নতুন সংযোগ বিক্রির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর এবং অন্যান্য করহার বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া মোবাইলে ন্যূনতম রিচার্জের পরিমাণ ১০ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। কাছাকাছি সময়ে অপারেটর ভেদে প্যাকেজ ও অফারসংখ্যা সীমিত করা হয়েছে। অনেক গ্রাহকই অল্প কিছু রিচার্জ করে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সংযোগ চালু রাখতেন। তাঁদের অনেকেই এখন তা আর করছেন না।

আরও পড়ুন

এফএওর প্রতিবেদন, বিশ্বে চাষের মাছে এখন তৃতীয় বাংলাদেশ

২০২৩ সালে ২৪ দিন বন্ধ থাকবে ব্যাংক

প্রতিদিন একজনের ৮০০ ডলারের অক্সিজেন লাগে