মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে কাবিননামার ৫ নম্বর কলামে থাকা ‘কুমারী’ শব্দটি সংবিধান পরিপন্থি এবং তা বাতিল ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, ‘কাবিননামায় কুমারী শব্দ থাকা নারীর জন্য অপমানজনক, বৈষম্যমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সংবিধান ও সিডও সনদের (বৈষম্য বিলোপ সনদ) পরিপন্থি’। এ কারণে ছয় মাসের মধ্যে কাবিননামার ফরম থেকে ‘কুমারী’ শব্দ বাদ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।


বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) ৩২ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেছেন। রায়ের অনুলিপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। রায়ে কাবিননামা থেকে ‘কুমারী’ শব্দ বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে পৃথক পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন উভয় বিচারপতি।


বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নাইমা হায়দার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, নিকাহনামার ২১ ও ২২ নম্বর দফায় বরের বর্তমানে কোনো বিবাহ বলবৎ আছে কি না, কেবল সে বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বর তালাকপ্রাপ্ত বা বিপত্নীক অথবা কুমার কি না, এ বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়নি। অন্যদিকে, তর্কিত ৫নম্বর দফায় কন্যা তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা কি না, পাশাপাশি কন্যা আগে কোথাও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন কি না, এ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে যা অপমানজনক, বৈষম্যমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সংবিধান ও সিডও সনদের পরিপন্থি। এ ধরনের তথ্য চাওয়ার বিধান সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩১নং অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষায় এ ধরনের হস্তক্ষেপ সংবিধানের ৩১ ও ৩২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংরক্ষিত নারীর ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদার অধিকার ক্ষুণ্ন করে। অবিবাহিত শব্দের পরিবর্তে কুমারী শব্দের প্রয়োগ নারীর জন্য অমর্যাদাকর ও অপমানজনক যা সংবিধানের ৩২ নং অনুচ্ছেদ এবং সিডও সনদের লঙ্ঘন।


হাইকোর্ট মনে করেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০২ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্দেশনা প্রদান ন্যায়সঙ্গত হবে। সে অনুসারে সংবিধানের ২৮, ৩১ ও ৩২ নং অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ১৬০১ নং ফরমের ৫ নম্বর দফা বেআইনি ঘোষণা করা হলো। বিবাদীদেরকে (আইন সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা) রায় পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নিকাহনামার (কাবিননামা) ৫ নম্বর দফা সংশোধন করে কুমারী শব্দটি বাদ দিতে হবে। সেখানে লিখতে হবে কন্যা অবিবাহিত, বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্ত নারী কি না। নিকাহনামার ২১ নম্বর দফা সংশোধন করে সেখানে অনুরূপভাবে লিখতে হবে, বর বিবাহিত/অবিবাহিত/তালাকপ্রাপ্ত/বিপত্নিক কি না।


বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন- ২০০৯ এর অধীনে প্রণীত নিকাহনামায় কন্যার ক্ষেত্রে ‘কুমারী’ কি না, এমন কলাম রাখা হয়েছে। কিন্তু একই ফর্মে পুরুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো কলাম নেই। যা সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩১নং অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। মুসলিম বিবাহ একটি চুক্তি ও পারস্পারিক সম্মত্তির মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ বিবাহের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সময়ে রেজিস্ট্রির কোনো বিধান ছিল না। জটিলতা এড়ানোর জন্য ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইনে বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রির বিধান রাখা হয়েছে। সুতরাং, বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য বর ও কনের সার্বিক অবস্থা সমন্বিতভাবে হওয়া উচিত। এ কারণে কন্যা কুমারী কি না, এ শব্দ বাদ দিয়ে বাকি বর্ণনা বলবৎ থাকবে।


২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট বিয়ের কাবিননামার ফরমের ৫ নম্বর কলামে কনে কুমারী কি না, এ শব্দ উঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কুমারী শব্দের স্থলে অবিবাহিত লিখতে বলেন আদালত।
ওই সময় এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।


আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার লিপি। সম্পূরক আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রিট মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। দুই বছর পর সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয় গত বৃহস্পতিবার।ওই সময় এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।


আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার লিপি। সম্পূরক আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রিট মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। দুই বছর পর সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয় গত বৃহস্পতিবার।


আরও পড়ুন

সোমবার বেলা ১১টায় জানা যাবে এসএসসি ফল, জেনে নিন খুঁটিনাটি

এক মাসে মোবাইল গ্রাহক কমেছে সাড়ে ২১ লাখ

এফএওর প্রতিবেদন, বিশ্বে চাষের মাছে এখন তৃতীয় বাংলাদেশ