নাসা মহাশূন্যে টমেটো চাষের জন্য পরীক্ষা শুরু করেছে। ভেজ-০৫ নামের এই পরীক্ষা নাসা শুরু করেছে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে। নাসার উদ্দেশ্য মহাশূন্যেই টমেটো চাষের মাধ্যমে সেখানে তাজা খাদ্যের সমস্যা দূর করা। এই পরীক্ষা সফল হলে নাসা মহাকাশচারীদের নিজেদের খাদ্য (অন্তত কিছু পরিমাণে) নিজেরাই উৎপাদন করতে শেখাবে।


মূলত ভেজ-০৫ নামের এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছোট আকারের টমেটো মহাশুন্যে চাষ করা। পরীক্ষাটি তারা দুইটি ভিন্ন আলোক অবস্থার মধ্যে চালাবে। একটি পরীক্ষা হবে মহাশূন্যে এবং আরেকটি একই সাথে একই অবস্থা তৈরি করে পৃথিবীর মাটিতে। আর এই পরীক্ষা শুরুর জন্যই নাসা ২৬ নভেম্বর একটি স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটে করে টমেটোর বীজ মহাশূন্যে পাঠিয়েছে। নাসার এক্সপেডিশন ৬৮ এর সদস্যরা ডিসেম্বরের ১ তারিখ হতে এই নতুন পরীক্ষার জন্য সকল প্রস্তুতি শুরু করেছে।


নাসার ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার নিকোল ম্যান এই টমেটো রোপণ করছেন। টমেটোগুলো অঙ্কুরিত হলে তখন মহাকাশচারীরা এই টমেটোগুলো পরীক্ষা করে তুলনা করে দেখবেন এগুলোর পুষ্টিগুণ, ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো। নিজস্ব মতামত এবং বৈজ্ঞানিক দুইভাবেই এই পরীক্ষা করা হবে। টমেটোগুলো খেয়ে দেখার মাধ্যমে এর স্বাদ, গঠন, রস সবকিছুই পরীক্ষা করে দেখার পরিকল্পনা করছে নাসা।


নাসা এই পরীক্ষা শুরু করেছে ভবিষ্যতে দীর্ঘ সময়ের কোন স্পেস মিশনের কথা মাথায় রেখে। নাসা স্বপ্ন দেখছে ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে মিশন পরিচালনা করার। সেই স্বপ্ন থেকেই নাসা বর্তমানের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে চাইছে। বারবার রকেটের মাধ্যমে আলাদা করে মহাকাশচারীদের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেয়া একইসাথে সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল একটি ব্যাপার।
এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষন করা খাবার স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো নয়। মঙ্গল গ্রহে মিশন কমপক্ষে ২-৩ বছর স্থায়ী হবে, এই লম্বা সময়ে খাবারের পুষ্টিগুণ ধীরে ধীরে কমে যাবে। তাই এই পরীক্ষা সফল হলে নাসা ভবিষ্যতে মহাকাশচারীদের একদম তাজা ও পুষ্টিকর খাবার দেয়ার একটি রাস্তা খুঁজে পাবে।


নাসা এর আগে মহাশূন্যে বিভিন্ন সবজি ফলানোর জন্য ভেজ-০১ হতে ভেজ-০৪ পর্যন্ত আরও চারটি পরীক্ষা করেছে। ভেজ-০১ ও ভেজ-০২ ছিল লেটুস পাতা ফলানোর পরীক্ষা, ভেজ-০৩ ও ভেজ-০৪ এ বাঁধাকপি, লেটুস উভয় প্রকার সবজি চাষের পরীক্ষাই করা হয়েছিলো। তবে কোনোবারই মানুষের খাবার যোগ্য সবজি নাসা ফলাতে পারে নি। তবে গত বছর নাসা মহাশুন্যে কিছু মরিচ ফলাতে সক্ষম হয়েছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় নাসা এবার টমেটো চাষ করতে চাইছে।


নাসা আশা করছে ভবিষ্যতে মহাশূন্যে চাষ করা এসব সবজি ও শস্য পৃথিবীতে চাষ করা সবজি সবজি ও শস্য হতেও পুষ্টিগুণে এগিয়ে থাকবে। প্রমান হিসেবে এই বছরের প্রথম দিকে বিজ্ঞানীরা জিনগতভাবে পরিবর্তিত লেটুস পাতা দেখিয়েছিলেন যা মহাশূন্যে চাষ করা যাবে। এই লেটুসগুলো সাধারণ লেটুসের মতো হলেও তা জিনগতভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে শুন্য অভিকর্ষে মানিয়ে নিতে পারে।


নাসা আশা করছে এতে করে মহাশূন্যে ভবিষ্যতে শুধু তাজা খাবার পাওয়া যাবে তাই নয়, এসব সবজি চাষে নাসার ক্রুরা মানসিকভাবেও চাঙ্গা থাকতে পারবেন। গভীর মহাশুন্যে ভ্রমনের পথ খুলে যাবে এই পরীক্ষার সফলতার মাধ্যমে এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


আরও পড়ুন

পৃথিবীর সবচেয়ে হালকা ১৪” ল্যাপটপ আনলো আসুস

টিএসএমসির ৫০০ কোটি ডলারের শেয়ার কিনছেন ওয়ারেন বাফেট

এক চার্জে ১৯ দিন! ফ্লিপ ফোন দিয়ে নোকিয়ার নতুন প্রত্যাবর্তন