দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স শিক্ষা কার্যক্রমের স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার। ভারতের চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরিচিত হন ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স নামে নতুন একাডেমিক এ বিভাগের সঙ্গে। নিজের এমএসসি ও পিএইচডি ডিগ্রি শেষ করেই দেশে এসে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ বিভাগ চালুর উদ্যোগ নেবেন এমন পরিকল্পনা ছিল তখন থেকেই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের এ অধ্যাপক উপাচার্যের দায়িত্ব পেলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি)। এবার স্বপ্ন পূরণের সময়। নতুন এ বিষয় চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদনও পেলেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই শুরুতে এ বিভাগ চালুর ব্যাপারে নিরুৎসাহী ছিলেন।


আধুনিক পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে ২০১১-১২ সেশন থেকে দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যবিপ্রবিতে চালু হয় শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের কার্যক্রম। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার যে স্বপ্ন নিয়ে এ বিভাগ চালু করেছিলেন, অবশ্য সে স্বপ্ন পূরণও হয়েছে। এ বছর যবিপ্রবি শিক্ষার্থী জহির রায়হান টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশের হয়ে অ্যাথলেটিকস ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশের ৪০০ মিটারে রেকর্ডধারী স্প্রিন্টারও তিনি। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জিমনেসিয়াম স্থাপন হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্রীড়াবিদ তৈরির পাশাপাশি শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে যবিপ্রবির পর দেশের আরো কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে উচ্চতর শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ।


পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমানে দেশে চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ চালু রয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১-২২ সেশনে চালু করে এ বিভাগ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ বছর চালু হয়েছে শুধু ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পরবর্তীতে ক্রীড়াবিষয়ক ব্যবহারিক পরীক্ষায়ও অংশ নিয়ে পাস করতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ব্যবহারিক পরীক্ষা ও পাস নম্বরে তারতম্য রয়েছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে মোট আসন ৩০টি। লিখিত পরীক্ষায় ৬০ নম্বর, ব্যবহারিক পরীক্ষায় ২০ ও সার্টিফিকেটে ২০ নম্বরসহ মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা। যবিপ্রবি শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. জাফিরুল ইসলাম জানান, ব্যবহারিক পরীক্ষায় শারীরিক সক্ষমতা ও যেকোনো একটি খেলায় দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। বড জাম্প, চিন আপ, ৫০০ ও ৮০০ মিটার দৌড়, এনডিউরেন্স টেস্ট বা সহনশীলতা পরীক্ষা এবং ব্যক্তিগত ইভেন্ট অর্থাৎ যে শিক্ষার্থী ফুটবল, ক্রিকেট বা নির্দিষ্ট যে বিষয়ে দক্ষ সেগুলোর জন্যও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিভাগের আসন সংখ্যা ৩০। বিশ্ববিদ্যালয়টির শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. সালাহ উদ্দীন জানান, এখানে মোট চারটি ইভেন্টে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। লং জাম্প, ৪০০ মিটার ও ২০০ মিটার দৌড় ও গোলক নিক্ষেপ। মোট ২৪ নম্বরের ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০টি আসন রয়েছে শিক্ষা অনুষদভুক্ত শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে। ৩০টি সাধারণ আসনসহ পেশাদার খেলোয়াড়, বিকেএসপি ও উপজাতি হিসেবে সংরক্ষিত কোটা রয়েছে ১০টি। ব্যবহারিক পরীক্ষায় মোট নম্বর ৫০। ক্রীড়া সার্টিফিকেট, ৪০০ মিটার দৌড় ও সাঁতার ইভেন্টের ব্যবহারিক নম্বর মূল্যায়নে বিবেচনায় নেয়া হয় বলে জানান বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের মোট আসন ৩০টি। সাধারণ আসন ২৫টি ও বিকেএসপির শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি আসন সংরক্ষিত। ভর্তিচ্ছুদের অংশ নিতে হয় ৩০ নম্বরের ব্যবহারিক পরীক্ষায়। শর্ট জাম্প, লং জাম্প ও ৫০ মিটার দৌড়ের তিনটি ইভেন্টেই উত্তীর্ণ হতে হয়।
শারীরিক শিক্ষা কলেজে
দেশে ছয়টি সরকারি ও ২৩টি বেসরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজে ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (বিপিএড) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ক্রীড়া পরিদপ্তরের আওতাধীন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা (বাগেরহাট), বরিশাল ও ময়মনসিংহের ছয়টি সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ ও ২৩টি বেসরকারি কলেজে ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (বিপিএড) এবং শুধু ঢাকা সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজে মাস্টার অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (এমপিএড) কোর্স চালু রয়েছে। বিপিএড ও এমপিএড কোর্সে ভর্তি হতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউজিসি স্বীকৃত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ নম্বর অথবা গ্রেডিং ও ক্রেডিট পদ্ধতিতে ন্যূনতম সিজিপিএ ২ দশমিক ২৫ থাকতে হয়। রয়েছে শিক্ষা বৃত্তির সুযোগ। বিপিএড ও এমপিএড কোর্সে উপস্থিতি ও শিক্ষা কার্যক্রম সন্তোষজনক হলে প্রতি ছাত্রছাত্রীকে যথাক্রমে মাসিক ১ হাজার ২০০ ও ২ হাজার টাকা হারে বৃত্তি প্রদান করা হয়। এছাড়া এমপিএড কোর্সে ছাত্রছাত্রীদের এককালীন ১ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।
সূত্র-বণিক বার্তা


আরও পড়ুন

ইউরোপে পড়াশুনা করতে কোন দেশে কত টাকার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টস লাগবে

খেলার মাঠ নেই সাড়ে ১০ হাজার সরকারি বিদ্যালয়ে

শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংক, চলছে আবেদন