২ অক্টোবর রোববার ছিল জাতীয় পথশিশু দিবস। দেশের পথশিশুদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিবছর এ দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা ও বরিশালের ৪০০ পথশিশুর ওপর চালানো জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি। গত মাসে এ জরিপ চালায় সংগঠনটি।

জরিপে উঠে এসেছে, দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে পথশিশুর সংখ্যা। তাছাড়া পথশিশুদের ওপর সহিংসতার চিত্রও ভয়াবহ। যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনও চলে তাদের ওপর। ৭৯ শতাংশ পথশিশু জীবনের কোনো একপর্যায়ে মানসিক, শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।

পিতৃপরিচয় না থাকায় ৭৬ শতাংশ পথশিশুকে মানসিক নিপীড়ন, হেনস্তা, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল শোনাসহ বিভিন্ন ধরনের কটূক্তির শিকার হতে হয়। তাছাড়া শুধু শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৬২ শতাংশ পথশিশু।

দৈনিক গড়ে ১০ ঘণ্টা ভিক্ষা করে একটি পথশিশু। ৩৫ শতাংশ শিশু ভিক্ষা করার কথা স্বীকার করেছে। ৪২ শতাংশ শিশু রাস্তায় বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে। ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক কোনো ধরনের পড়াশোনা করছে না।
এ বিষয়ে গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, পথশিশুদের সুরক্ষা জরুরি। তারা ফুটপাতে, স্টেশনে ঘুমায়। এরা এতই নিচে পড়ে গেছে যে, তাদের থাকার জায়গা নেই, মা-বাবা নেই। তাদের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করা জরুরি।

তিনি বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর অনেকগুলো শিশুনিবাস করেছে। তারা বহু শিশুকে নিয়ে যাচ্ছে, সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করছে। তবে রাস্তাঘাটে অসংখ্য পথশিশুর দেখা মেলে। তার মানে বোঝা যাচ্ছে, সুরক্ষাব্যবস্থা অপ্রতুল। সরকারকে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। বেসরকারি পর্যায় থেকেও উদ্যোগ নিতে হবে।

‘যদিও ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, প্রতিটি শিশুই স্কুলে যাবে। একটি শিশুও ঝরে পড়বে না, রাস্তায় ঘুরবে না, টোকাই হবে না। পথশিশুরাও স্কুলে যাবে, পড়াশোনা করবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়।’

এর অংশ হিসেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমলাপুর ও কারওয়ান বাজারে পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু হয়েছে। এ দুই কেন্দ্রে ১৬০ শিশুর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এর বাইরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পথশিশুদের সুরক্ষায় কিছু প্রকল্প চলমান। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা ও বরিশালে সাতটি পুনর্বাসনকেন্দ্র করা হয়েছে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত পথশিশুর প্রায় ৩০ শতাংশই ছেলে ও ১৭ শতাংশ মেয়ে। ১০-১৭ বছর বয়সী শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

মাদকে ঝুঁকে পড়া এসব শিশুকে সঠিক তদারকি না করা হলে তারা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশের সমৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় অন্তরায় হতে পারে তারা। তাই এসব শিশুর অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টি সামনে এসেছে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও ইউনিসেফের প্রকাশিত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ পথশিশু রয়েছে। ঢাকায় আছে ৭ লাখ। ২০২৪ সাল নাগাদ দেশে মোট পথশিশুর সংখ্যা হবে ১৬ লাখ ১৫ হাজার ৩৩০।

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর মায়ের কোল হলো শিশুদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়। ক্ষুধার তাড়নায় শিশুরা যখন মায়ের কোল ছেড়ে, ঘর ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়ায় তখনই তাদের পরিচয় হয়ে যায় পথশিশু। তখনই তাদের জীবন অবহেলা-বঞ্চনায় জড়িয়ে যায়।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এমন হাজার হাজার পথশিশু রয়েছে। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, মাঠ-পার্ক বা খোলা আকাশের নিচে তাদের বসবাস। যদিও খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এ মৌলিক চাহিদাগুলো যথাযথভাবে পাওয়ার অধিকার তাদের আছে।

 

সূত্র-ডেইলি সিলেট