ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে অনেক রকম ভুল ধারণা রয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষে ভোগান্তিই কেবল বাড়িয়ে তোলে। স্তন্যদানকারী মা আক্রান্ত হলে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি করে থাকেন তা হলো- ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন কিনা? মায়ের ধারণা, এতে শিশু হয়তো ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়বে। কিন্তু এমন ধারণা মোটেও সঠিক নয়। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। মায়ের দুধের সঙ্গে ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুর ভাইরাস শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। তবে শিশুটিকে যদি ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্ত মশা কামড় দেয়, তাহলে শিশুটিরও ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে।

অভিভাবকের ভ্রান্ত ধারণা এবং এর জবাব

ভ্রান্ত ধারণা ১

অনেকেই মনে করে থাকেন, ডেঙ্গুজ্বর একটা ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে বা সঙ্গে থাকলে অথবা যত্ন করলে, একসঙ্গে খাবার খেলে তারও ডেঙ্গুজ্বর হয়ে যাবে। তাই আক্রান্ত রোগীকে পৃথক করে রাখা উচিত।

জবাব

এমন ধারণা মোটেও সত্য নয়। তবে প্রকৃত সত্য উল্লিখিত ভ্রান্ত ধারণার ঠিক উল্টো। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে, একই বিছানায় ঘুমালে, একই তোয়ালে কিংবা একই কাপড়-চোপড় ব্যবহার করলে, একই গ্লাস বা প্লেট ব্যবহার করলে অন্যদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।  তবে আক্রান্ত ব্যক্তি উপসর্গ দেখা দেওয়া থেকে শুরু করে ৬-৭ দিন পর্যন্ত মশার জন্য সংক্রামক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এ সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো এডিস মশকী কামড় দিলে সেও ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহক হয়ে পড়বে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলে তখন আর এটি হবে না। তাই এ সময়ে আক্রান্ত রোগীকে মশারির নিচে রাখা যেতে পারে।

ভ্রান্ত ধারণা ২

কেউ কেউ মনে করেন, একবার এই জ্বর হলে বাকি জীবন আর কখনো হবে না।

জবাব

এমন ধারণা সত্য নয়। কারণ ভাইরাসের যে কোনো একটি প্রজাতি দিয়ে একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ভবিষ্যতে ভাইরাসের সেই প্রজাতির মাধ্যমে আর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ রোগীর আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। তবে  বাকি তিনটি প্রজাতির যে কোনো একটির মাধ্যমে নতুন করে আবার আক্রান্ত হতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন, কেউ যদি পৃথকভাবে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি প্রজাতির মাধ্যমে জীবনে ৪ বার আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে বাকি জীবন আর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ভ্রান্ত ধারণা ৩

ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বাতাসে ছড়ায়- এমনও ভাবেন অনেকে।

জবাব

আসলে শুধু ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত এডিস মশকীর কামড়েই কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। কাজেই বাতাসে ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু উড়ে বেড়ানোর সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন

পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা নষ্টের যেসব কারণ

ভ্রান্ত ধারণা ৪

খাবার-দাবারের ব্যাপারে অনেকে মনে করেন, ডেঙ্গু রোগীকে শুধু স্যালাইন অথবা শুধু তরল খাওয়ানো যাবে, এর বাইরে অন্য কিছু নয়।

জবাব

এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ডেঙ্গুজ্বরের রোগীকে সব ধরনের খাবারই খাওয়ানো যাবে। তবে  তরল খাবার বেশি বেশি খাওযাতে হবে।

 ডা. অমৃত লাল হালদার

লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

সহযোগী অধ্যাপক, শিশু ও নবজাতক বিভাগ,

বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২ (মহিলা ও শিশু হাসপাতাল)

সেগুনবাগিচা, ঢাকা

০১৬৩৬৬৯২২৯৮; ৯৫১১০১০-২১