নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে ৪ বছর বেশি বাঁচে বলে জানা যায় বিভিন্ন গবেষণায়। তবে জীবনের বেশিরভাগ সময়ই নারীরা নানা রোগে ভোগেন। হৃদরোগ ও স্ট্রোকসহ নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভোগার ঝুঁকি নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।এমনকি পুরুষের তুলনায় নারীদের ব্যথার অনুভূতিও বেশি। অন্যদিকে পুরুষের চেয়ে বেশিরভাগ নারীই জটিল রোগে ভুগলেও তাদের মধ্যে চিকিৎসা গ্রহণের হার কম।

তবে নারীদের মধ্যে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কেন বেশি? বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু হরমোনের প্রভাবে নারীর স্বাস্থ্যগত সমস্যা বেড়ে যায়, বিশেষ করে মধ্যবয়সের পর থেকে।ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট ফর উইমেন’স হেলথের একজন লেকচারার ও আণবিক জেনেটিসিস্ট ডা. হেলেন ও’নিলের মতে, ছোটবেলা থেকেই মেয়েদেরকে ব্যথার অনুভূতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয় যে সেটি স্বাভাবিক।

তবে বেশিরভাগ অভিভাবকই তাদেরকে শেখায় স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর পিরিয়ডের মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে। ফলস্বরূপ তিনি বলেছেন, এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত নারীরা প্রায়শই রোগ নির্ণয়ের জন্য ৮ বছর অপেক্ষা করেন ও পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (পিসিওএস) নির্ণয় করতে ৪ বছর সময় লাগতে পারে।

ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়া অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়, যেমন- বারবার মূত্রনালির সংক্রমণ। যা স্থানীয় ইস্ট্রোজেন জেল ব্যবহার করে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

‘নারীর স্বাস্থ্য কৌশল’ সম্পর্কি এক গবেষণা উল্লেখ করা হয়, গর্ভপাত বা মেনোপজের মতো নারীর কিছু নির্দিষ্ট বিষয়গুলোতে যথেষ্ট নজর দেওয়া হয় না পরিবার থেকে।

এমনকি গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে নারীদের প্রতিনিধিত্বও কম লক্ষ্য করা যায়। ডা. ও’নিল উল্লেখ করেছেন, ‘একটি বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির শেষ ২৬টি পরীক্ষায় শুধু ২৬ জন নারী অংশগ্রহণ করেন।

ডা. ও’নিল জানান, নারীদের শীর্ষ ৩ হত্যাকারী রোগ হলো- কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি), অস্টিওপরোসিস ও ডিমেনশিয়া। এসব জটিল রোগই হরমোন দ্বারা প্রভাবিত।

ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার্সে নারীদের মারা যাওয়ার ঝুঁকি দুই-তৃতীয়াংশ বেশি, কারণ আমাদের মস্তিষ্কে ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টরের দ্বিগুণ সংখ্যা আছে ও হাড় থেকে ক্যালসিয়ামের ক্ষয় সরাসরি হরমোনের পতনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র কার্ডিয়াক নার্স জোয়ান হুইটমোর জানান, বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের প্রমাণ থেকে জানা যায় মেনোপজাল পরবর্তী নারীদের মধ্যে, ইস্ট্রোজেনের কম ঘনত্ব ও এন্ড্রোজেনের উচ্চ ঘনত্ব ওই বয়সের বর্ধিত সিভিডির জন্য দায়ী হতে পারে।

স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও ব্যায়াম হৃদরোগ, ডিমেনশিয়াসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে এই নার্স পরামর্শ দেন, বয়স্ক নারীদের হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত।

ডায়েট ডিজাস্টার ফর দ্য সেভেন এজ অব উইমেন দেখায় এক তৃতীয়াংশ নারীকে বলা হয়েছে তাদের পুষ্টির ঘাটতি আছে। প্রতিবেদনে চিহ্নিত সাধারণ পুষ্টিজনিত ঘাটতিগুলোর মধ্যে আছে- আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ফোলেট ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।

সূত্র: মিরর.কো.ইউকে