চুল পড়া এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুল পড়া সমস্যা ঠেকাতে বাহারি সব হেয়ার ফল শ্যাম্পু, ঘরোয়া প্যাক ট্রাই করে ফেলি, কিন্তু তাতেও যেন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। একজন সুস্থ মানুষের মাথায় গড়ে এক থেকে দেড় লাখ চুল থাকে। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টা পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক।

কিন্তু এই চুল পড়া যখন অস্বাভাবিক পরিমাণে হয়, চুল পাতলা হয়ে যায় তখনই আমাদের দুশ্চিন্তা শুরু হয়। এই চুল পরার পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ থাকবে। সেই কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে আমাদের জীবনচর্চার মাঝেই। চলুন দেখে আসি দৈনন্দিন জীবনের কী কী বিষয় আমাদের চুল পড়ার পেছনে দায়ী হতে পারে। এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার আগে চুল পড়ার কারণ জানতে হবে।

 কি কারণে চুল পড়ে?

 ১) সাধারণত Androgenetic কারণে চুল পড়ে এবং এটি ছেলে এবং মেয়ে সবার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন যেমন টেস্টোস্টেরন, অ্যান্ড্রোস্ট্রেনডিয়ন, ডিএইচটি হরমোনগুলো সাধারণত ছেলেদের মধ্যে বেশী এবং তুলনামূলক ভাবে মেয়েদের কম দেখা যায়। এরা হেয়ার ফলিকলের ওপর কাজ করে ও চুল পড়া বাড়িয়ে তোলে।

২) এছাড়া চুল পড়া বংশগত হতে পারে। অনেক পরিবারের এই বংশগত চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়। যদিও চুল পড়া কোন রোগ নয় তবুও থাইরয়েডের সমস্যা, অ্যানিমিয়া, মাথার তালুর রিং ওয়ার্ম, এবং অনেক দিনের মানসিক দুশ্চিন্তার জন্য চুল পড়ে যেতে পারে।

৩) অনেক সময় কিছু ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়ায় যেমন ক্যান্সারের কেমোথেরাপি সাময়িক ভাবে চুল পড়া বাড়িয়ে দিতে পারে। মেডিসিন নেয়া বন্ধ করলে তা নিজ থেকে ঠিক হয়ে যায়।

৪) আবার অনেক সময় খাবারে পুষ্টির অভাব ঘটলে চুল পড়া বেড়ে যায়। ডায়েটে প্রোটিনের অভাব হলে এবং কিছু কিছু মিনারেলস এবং ভিটামিনের ঘাটতি চুল পড়া বৃদ্ধি করে অনেক গুন। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের সন্তান জন্মদানের পর কিছু হরমোনের কারণে অথবা মেনপজের পড় চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে।

সবার একইরকম ভাবে চুল পড়ে না। কারো মাথার কিছু অংশে চুল গজায় না আবার কারো পুরো মাথার চুল কমে যেতে থাকে। এক এক জনের মধ্যে এক এক রকম চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়।

 চুল পরা বন্ধে নিচের নিয়ম গুলো মেনে চলুন

 ১)  চুল পড়া বন্ধে বালিশের কাভার

সিল্কের তৈরি বালিশের কাভার ব্যবহার করুন। সুতির তৈরি কাপড়ের উপর আপনার চুল সারা রাত পড়ে থাকে আর তখন সুতির কাপড় আপনার চুলের সমস্ত ময়েশ্চার শুষে নেয়। ফলে চুল অনেক শুষ্ক হয়ে যায় আর বালিশের কাপড়ের সাথে ঘষা লেগে লেগে আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। সিল্কের কাপড় কখনও চুলের ময়েশ্চার শুষে নেয় না। তাছাড়া সিল্কের তৈরি বালিশের কাভার ব্যবহার করলে চুলে জট বাঁধবে না।

২) তোয়ালের ব্যবহার 

চুল শুকানোর জন্য তোয়ালে ব্যবহার না করে আপনার কোন পুরোনো টি শার্ট বা পুরোনো পরিষ্কার নরম কাপড় ব্যবহার করুন। কারণ সুতির বালিশের কাভারের মতোই তোয়ালেও এক-ই ভাবে চুলের ময়েশ্চার শুষে নিয়ে চুলকে শুষ্ক, রুক্ষ, প্রাণহীণ এবং ভঙ্গুর করে তোলে।

৩) চুল পড়া বন্ধে চুলের আগা ছাঁটা

প্রতি ৬ সপ্তাহে চুলের আগা ছাঁটতে হবে কারণ দু’মুখো চুল আপনার চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ট্রিম না করলে এই ফাটার পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।

৪) ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু

চুলের যত্নে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন যেটার মধ্যে ন্যাচারাল অয়েল থাকে। যেমন নারিকেল তেল, জ়োজ়োবা তেল ইত্যাদি। এতে চুল ময়েশ্চেরাইজ থাকবে। মাইল্ড বা ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টসযুক্ত শ্যাম্পুতে চুলের ক্ষতি কম হয়।

৫) চুল পড়া বন্ধে ভেজা চুলে স্টাইল

হালকা ভেজা চুল হলেও তা ভালো মত শুকিয়ে বাঁধতে হবে। আপনি যে ধরনের স্টাইলেই চুল বাঁধুন না কেন, তার আগে সম্পূর্ন চুল ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে হবে।

৬) চুল শুকানো

হেয়ার ড্রায়ারের মাধ্যমে চুল না শুকিয়ে বাতাসে চুল শুকানোর চেষ্টা করুন। কারণ হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস আপনার চুলের জন্য ক্ষতিকর। রেগ্যুলার হিট স্টাইলিং করার অভ্যাস থাকলে সেটা কমিয়ে আনুন। অকেশনালি আপনি স্টেইটনার বা ড্রায়ার ইউজ করতে পারেন, কিন্তু তার আগে চুলে হিট প্রটেক্টিং স্প্রে দিয়ে নিতে হবে।

৭) চুল আঁচড়ানো

ভেজা চুল আঁচড়ানো যাবে না। অনেকে গোসল শেষ করে চুল তোয়ালে দিয়ে মুছেই চুল আঁচড়ে নেন। এতে করে চুল অনেক বেশি পড়ে কারণ ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে। ঐ সময় চুলে টান লাগলে চুল খুব সহজেই ভেঙ্গে পড়ে বা ঝরে পড়ে। তাই চুল শুকানোর পরে তা আঁচড়ান।

৮) ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করুন

আপনার চুলের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য ভালোভাবে খাওয়া দাওয়া করুন। প্রচুর পরিমাণে ফল, পানীয় আর প্রোটিন খান। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন খেতে পারেন। ভেতর থেকে পুষ্টি পেলে চুল এমনিতেই সুন্দর হয়ে উঠবে।

৯) কন্ডিশনারের ব্যবহার

ডিম কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করলে তা আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভালো করতে সাহায্য করবে, কারণ ডিমে আছে প্রচুর প্রোটিন। চুলের ৭০ শতাংশই হলো কেরাটিন প্রোটিন। তাই ডিমের প্রোটিন ড্যামেজ হয়ে যাওয়া চুলকে আবার আগের মতো সুন্দর অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। ডিমের কন্ডিশনার আপনি খুব সহজেই প্রস্তুত করতে পারেন।

প্রথমে একটি ডিম ভেঙ্গে তার সাথে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মেশান। একটি কাঁটা চামাচ দিয়ে ভালো মতো মেশাতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো মতো ধুয়ে নিন। চুলের অতিরিক্ত পানি হাত দিয়ে চেপে চেপে ঝরিয়ে নিন। এরপর একটি শুকনো তোয়ালে দিয়ে একবার শুধু চুলগুলো চেপে ধরে আবার ছেড়ে দিন, কিন্তু চুল শুকানোর চেষ্টা করবেন না। এবার চুলের প্রতিটা অংশে ডিম আর অলিভ অয়েলের মিশ্রণ লাগান। যাদের চুলের আগা ফেটে যায় তারা চুলের আগায় মিশ্রণটি ভালো মতো লাগাবেন। এব্র একটি শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন এবং ১০ – ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার ডিমের কন্ডিশনার ধুয়ে ফেলুন ভালো মতো ।

১০) সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার

এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে যেটা আপনার স্ক্যাল্পের মৃত কোষগুলো ঝরে যেতে সাহায্য করবে। এই মৃত কোষগুলো স্ক্যাল্পের ফলিকল ব্লক করে রাখে, যে কারণে নতুন চুল গজানোর পথে বাঁধা দেয়। কেননা তখন স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। অল্প পরিমাণ শ্যাম্পু নিয়ে মাথায় ম্যাসাজ়ের মত করে লাগিয়ে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।