Spoken+Grammar Bundle

জ্বালানি সংকট ও চলমান লোডশেডিংয়ের ফলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশ। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সব ধরনের শিল্পের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এর সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমান প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাবে সরকার একদিনে সেবা খাত থেকে পায় ৫ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা, শিল্প খাত থকে ২ হাজার ৪০১ কোটি টাকা, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা থেকে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ খাত থকে ১১০ কোটি টাকা এবং গ্যাসের খাত থেকে ২২ কোটি টাকা পেয়ে থাকে।

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে দৈনিক ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। হিসাবে দেখা যায়, বিদ্যমান লোডশেডিংয়ের ফলে সেবা খাতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা, শিল্প খাতে ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে ৩৩ কোটি টাকা। এ হিসেবে মোট অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ হাজার ১৮ কোটি টাকা। এই আর্থিক ক্ষতির কুফল মূলত সরকার এবং খাতসংশ্লিষ্ট উভয়েরই।

লোডশেডিংয়ের ফলে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমেছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। পাশাপাশি বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়ও। লোডশেডিংয়ের সময় ডিজেলচালিত জেনারেটরে কারখানা সচল রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫০-৬০ শতাংশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যবসা ও শিল্পখাতসহ দেশের মানুষকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়তে হবে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

রপ্তাানি খাতে সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ বা ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়। গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আগের বছরের (২০২১-২২) জুলাইয়ের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসের দাম এখনো অস্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। ডলারের সংকট থাকায় সরকার খোলাবাজার থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সুবিধাজনক অবস্থায় না থাকায় তেল-গ্যাস আমদানি করা যাচ্ছে না।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ না থাকায় সরকারকে কিছু পাওয়ার প্লান্ট বিকল্প ভিত্তিতে ব্যবহার করতে হচ্ছে। লোডের কারনে আমরা দিনের বেলা কিছু পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ রাখছি। আবার দিনে যেগুলো চালাচ্ছি সেগুলো রাতে বন্ধ রাখছি। এজন্য লোডশেডিংয়ের জায়গাটা একটু বড় হয়ে গেছে। আশার করি নভেম্বরের মধ্যে লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে। সংকটের ফলে বিকল্প উপায়ে জেনারেটরের মাধ্যেমে উৎপাদন চালু রাখছেন শিল্প মালিকরা। কিন্ত ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জেনারেটরের মাধ্যমে কারখানা চালু রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।

টঙ্গীর সাইনবোর্ড এলাকার এলিট গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রামজুল সিরাজ গতকাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জেনারেটর চালানোর জন্য আগে ৮০০ থেকে ১ হাজার লিটার ডিজেল দরকার হতো। লোডশেডিংয়ের কারণে সেটি ৪ হাজারে লিটারে চলে গেছে। প্রতিদিন ছয়-সাত লাখ টাকার ডিজেল কিনতে হচ্ছে। গত মাসে প্রায় দুই কোটি টাকার ডিজেল কিনতে হয়েছে। অথচ কারখানায় উৎপাদন হয়েছে আগের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। সরকার যদি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে।’ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বর্তমানে জ্বালানি সংকটের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, সেটি আশাজাগানিয়া নয়। সরকার বিভিন্ন সময়ে জ্বালানির সমাধানের যে ইঙ্গিত দিয়েছিলো, সেটিও কার্যকর হচ্ছে না। জ্বালানি সংকটের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। যার প্রভাবটা সবখানেই পড়ছে। শিল্পকারখানাও তার বাইরে নয়। যেহেতু বাইরে থেকে তেল আমদানি করা যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে সরকার ডিজেলে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করতে পারে। এছাড়া ডিজেলের তুলনায় ফার্নেস তেলে খরচ কম। সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ডিজেলের বদলে ফার্নেস তেলে মেজরিটি আনতে পারে, তাহলে লোডশেডিং কমার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সাশ্রয়ও হবে।’

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাধা এসেছে। যার কারণে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তবে আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

বিদ্যুৎ সচিব হাবীবুর রহমান বলেন, ‘ঘোড়াশালে যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা গিয়েছে তা দু একদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হয়ে গেলে ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হবে। ফলে দ্রুতই লোডশেডিংয়ের পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে।’

ওমর ফারুক,

সূত্র-ঢাকাটাইমস

 | প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর ২০২২,