চলতি বছরের মে মাসে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছিলেন, কাতারের বিশ্বকাপ ভেন্যুতে ফুটবল স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণে যেসব শ্রমিক জড়িত ছিলেন, তাদের কাজের জন্য তারা গৌরব ও মর্যাদা অনুভব করতে পারেন। ফিফা সভাপতির এমন বক্তব্যের জন্য তিনি কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন, কেননা এটা কে জানে না যে কাতার বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কতটা অমানবিক ও ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নীতি ও শর্তের সিকি ভাগও তোয়াক্কা করা হয়নি।


তীব্র আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিশ্বকাপের আসর তো শুরু হলো, কিন্তু যারা এ অসাধ্য সাধন করলেন সে শ্রমিকদের ভোগান্তি যে কাটেনি। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, এখনো সহস্রাধিক শ্রমিক স্থাপনাগুলোর কাছাকাছি অবস্থান করছেন এবং তাদের পারিশ্রমিক পেতে বহু কাঠ-খড় পোড়াতে হচ্ছে।


এ বিশাল কর্মযজ্ঞে শ্রমিক প্রেরণের দিক দিয়ে ভারতের পরই নেপালের অবস্থান। ২০১০ সালে স্টেডিয়ামগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে নেপালের সহস্রাধিক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। নেপালি কর্মীরা জানিয়েছেন, কাজ শেষ হলেও তারা মাসের পর মাস ধরে তাদের পারিশ্রমিকের অপেক্ষায় আছেন।


আন্তর্জাতিক নিউজ নেটওয়ার্কের এক তদন্তে দেখা গিয়েছে, কিছু শ্রমিক এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন যে কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের ক্যামেরাসহ প্রবেশের অনুমতি দেয়ার ঝুঁকি নিয়েছিল। তখন দেখা গিয়েছে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছিল শ্রমিকদের জীবনযাপন। খাবার কিংবা নিরাপদ পানির সংকটও তীব্র।


এছাড়া রাতে স্থাপনা এলাকার আশপাশে কোনো শ্রমিককে হাঁটাহাঁটি করতে দেখলে কাজ ছেড়ে পালিয়ে যাবে সন্দেহে তাকে নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি করা হতো। যদিও এসবের কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই পাসপোর্ট জমা রাখে, যাতে শ্রমিকরা অনুমতি ছাড়া কাজ ছাড়তে না পারেন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, মৃত শ্রমিকদের কফিনগুলো যখন বাড়িতে পাঠানো হয় তখন তাদের পরিবারকে ঠিকমতো বলা হয় না যে শ্রমিকের সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল। এছাড়া মৃত শ্রমিকের সম্পূর্ণ বেতন পরিশোধ হয়েছে কিনা এ ব্যাপারেও বিস্তারিত জানানো হয় না।শ্রমিকদের এমন বেহাল দশার কারণে কাতার বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। শ্রমিকদের মতো সংবেদনশীল বিষয় জড়িত থাকার ফলে দেশটির শ্রম ব্যবস্থার আইনি কাঠামো পরিবর্তনেরও দাবি উঠেছে।


কাতার সরকার বরাবরই দাবি করে আসছে, কাতারে প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর হার স্বাভাবিক রয়েছে। কাতারে প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সে হিসেবে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখজনক এবং মৃত্যু ঠেকানোর জন্য চেষ্টার কমতি তারা করেনি।


এ ব্যাপারে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফা বলেছে, বিশ্বজুড়ে যত নির্মাণকাজ হচ্ছে, সে তুলনায় ফিফা বিশ্বকাপের নির্মাণকাজে দুর্ঘটনার হার বেশ কম। কারণ এখানে খুব গুরুত্বের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তার বিষয়টি মেনে চলা হয়।
বণিক বার্তা

আরও পড়ুন

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন ন্যান্সি পেলোসি

বিশ্বের ৫৪ দেশ দেউলিয়া হতে পারে

৮০০ কোটি ছুঁল বিশ্বের জনসংখ্যা, ভারতের অবদান সর্বাধিক