Spoken+Grammar Bundle

ইংরেজিতে ‘দ্য লাস্ট ড্যান্স’ কথাটি হরহামেশাই শোনা যায়, এবারের বিশ্বকাপে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমার, লুকা মদ্রিচ এবং লিওনেল মেসি এমন সব তারকা ফুটবলারদের জন্য ‘দ্য লাস্ট ড্যান্স’।ফুটবলকে যদি শিল্প ধরা হয়, এই শিল্পের শ্রেষ্ঠতম কুশীলবদের শেষ প্রদর্শনী বলা চলে কাতার বিশ্বকাপকে।আর এই লাস্ট ড্যান্সের শেষ মুদ্রা পর্যন্ত নাচার যোগ্যতা অর্জন করেছেন লিওনেল মেসি।

 বাকিরা মঞ্চে নেই এখন, রোনালদো বিদায় নিয়েছেন দেখেছেন মুদ্রার উল্টোপিঠ, যে পিঠে কান্না, হতাশা এবং গ্লানি ছিল, বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পরে ইন্সটাগ্রামে স্টোরিতে লিখেছেন, “গ্লানি, কষ্ট এবং পরিশ্রম।”নেইমার দেখেছেন হঠাৎ পতন, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নেইমার যখন গোল করেন অনেকেই ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের শেষ চার মিনিটে গল্প বদলে গেল।

 এবারে লুকা মদ্রিচ, আর্জেন্টিনাকে ২০১৮ সালে যে ব্যবধানে হারিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া, সেই ৩-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল মদ্রিচের দল।রোনালদো, নেইমার, মদ্রিচ আর মেসি কেউই বিশ্বকাপ জেতেননি, কিন্তু গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে ফুটবল সমর্থকদের অকুণ্ঠ সমর্থন কুড়িয়েছেন, ভালোবাসা পেয়েছেন এবং মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন।

 আর এবারে মেসি আরও একবার সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বকাপটাও ছুঁয়ে দেখার, নিজের করে নেয়ার। মেসিই আছেন, তিনি কাতার বিশ্বকাপ নিজের করে নিচ্ছেন, এমনটাই ছিল বিশ্বকাপের আগের মুহূর্তগুলো, লিওনেল মেসিকে ঘিরেই সকল আগ্রহ ছিল, মেসি ছিলেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

আরও পড়ুন

মিডিয়া প্রোটেক্টেড মেসি? ফ্যাক্ট বনাম ফ্যালাসি

 লিওনেল মেসি মাঠেও প্রমাণ করলেন, কেন তাকে ঘিরে আগ্রহ, আকর্ষণের যথাযোগ্য ব্যক্তি তিনি।মেসির নাম এলে রোনালদোর নামটাও দীর্ঘদিন এসেছে, এবার গ্যারি লিনেকার প্রশ্ন তুললেন, “এটা নিয়ে আর বিতর্ক আছে?”বিতর্ক হয়তো অনেকে করবেন, বলতে চাইবেন মেসি তো বিশ্বকাপ জেতেননি এখনো।

 আর্জেন্টিনা যে ১২টি গোল করেছে এখনও পর্যন্ত তার মধ্যে ৫টি গোল মেসি করেছেন, চারটি গোল করিয়েছেন।

 নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এমন এক পাস দিয়ে মলিনাকে দিয়ে গোল করিয়েছিলেন যা দেখে বিস্মিত ছিলেন বিশ্লেষকরা। রক্ষণভেদী তো বটেই, পৃথিবীর খুব কম ফুটবলার অমন এক সরু কোণ থেকে এই পাসের কথা ভাবতে পারতেন, কার্যকর করা তো দূরের কথা।

 সেমিফাইনালেও মেসি পেনাল্টি থেকে গোল করেছেন, এবারও তিনি এমন এক অ্যাসিস্ট করেছেন, যেটা দেখে অনেকের মন্তব্য, ‘এই গোলটা মেসির নামে লেখা হোক’। ডান পাশ থেকে বল নিয়ে পায়ে বল রেখেছেন দীর্ঘ সময়, বল নিয়ে ক্রোয়েট ডিফেন্ডারকে রীতিমতো নাচিয়েছেন, শেষে হুলিয়ান আলভারেজকে এমন এক বল বানিয়ে দিয়েছেন যেটা গোল না করলে অপরাধ হতো।লিভারপুলের সাবেক রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জেমি ক্যারেঘার ম্যাচ শেষে টুইট করেছেন, “মেসি – সর্বকালের সেরা।”

 মেসি এখন রোনালদো, নেইমার, মদ্রিচ এসব প্রশ্নের উত্তর পেরিয়ে গেছেন, পরের ধাপে যেতে হলে তাকে বিশ্বকাপ জিততে হবে বলছেন বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভের বিশ্লেষক রব গ্রিন।

 যে ধাপে আছেন, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, পেলে, জিনেদিন জিদান।

আরও পড়ুন

মরক্কোর সাফল্যের রহস্য ১৪ ‘ইউরোপীয়’

এই ফাইনাল ম্যাচে মাঠে নামলেই মেসি একটি রেকর্ড গড়বেন, জার্মানির লোথার মাথাউসের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড ভেঙ্গে এগিয়ে যাবেন।মেসির ২৬তম বিশ্বকাপ ম্যাচ হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল।মেসি এখন আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ গোলের মালিক।

আট বছর আগে মেসি বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার গোল্ডেন বল জিতেছিলেন, এবারে মেসির সামনে গোল্ডেন বল, গোল্ডেন বুট দুটিই সম্ভব।একমাত্র বাধা হতে পারেন কিলিয়ান এমবাপে, তবে এমবাপের চেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট আছে মেসির।

 লিওনেল মেসি কাতার বিশ্বকাপেই চারবার ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন।এর চেয়ে বেশি আর কোনও ফুটবলার পাননি।

 সামনের ব্যালন ডি অরও মেসি জিতে যেতে পারেন।আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনির মতে, মেসিই সর্বকালের সেরা ফুটবলার।“আমি এটা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি। আমি যে তার অনুশীলন দেখতে পাই এটা সম্মানের। আমার বেশি কিছু বলার নেই। মেসি স্কোয়াডে আছেন, এটাই একটা বাড়তি পাওয়া।”

 বিবিসিতে অ্যালান শিয়েরার বলেছেন, “মেসির কারণেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে। সবাই তার দিকে চেয়ে থাকে। মেসি আগের মতো খাটেন না, মেসি আগের মতো দৌড়ান না কিন্তু তিনি আগের মতোই প্রভাবশালী।”

 মেসির সাবেক সতীর্থ পাবলো জাবালেটা বিবিসি টিভিতে বলেছেন, “মেসি ডান দিকে যেসব বল পেয়েছেন এবং এগিয়ে যাচ্ছেন এটা চোখের জন্য শান্তিদায়ক। প্রতিবার মেসি পায়ে বল পাচ্ছেন, মনে হয় এবার কিছু একটা হবে। মেসি বল পায়ে রাখতে পারেন, নিজের সতীর্থের পায়েই দিতে পারেন। সহজে বল হারান না।”

 মেসি নিজে বলছেন তিনি খেলাটা উপভোগ করছেন, তার খুব ভালো লাগছে।আমি প্রতিদিন মাঠে নামার সময় শক্তিশালী অনুভব করি। আমি খুব আনন্দিত এই বিশ্বকাপে।”

 মেসির সাবেক ক্লাব বার্সেলোনা সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন, “মেসি, তুমি কখনোই নিজেকে সেরা প্রমাণ করা থেকে ক্লান্ত হও না।”মেসির সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাটকো দালিচ বলেছেন, “এই মেসিকেই সবাই প্রত্যাশা করেন। মেসিকে নিয়ে বেশি বলার নেই।”

আরও পড়ুন

আর্জেন্টিনা গোলকিপারকে ‘অতিমানব’ বানিয়েছেন যে মনোবিদ

 মেক্সিকোতে ডিয়েগো ম্যারাডোনা যেটা করেছেন ১৯৮৬ সালে, ইয়োকোহামায় ব্রাজিলের রোনালদো করেছিলেন ২০০২ সালে এবার মেসি সেই পথেই আছেন।

আর বাকি একটি ধাপ।

 আর্জেন্টিনা তাদের ষষ্ঠ ফাইনাল নিশ্চিত করেছে।

ম্যারাডোনা এখনও পর্যন্ত দেশটির সর্বকালের সেরা বিবেচিত হয়ে আসছেন।

অ্যালান শিয়েরারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল গত রাতে, ‘মেসি নাকি ম্যারাডোনা’।

শিয়েরার বলেছেন, ‘এখনও পর্যন্ত ম্যারাডোনা, কিন্তু রবিবার আমার ধারণা বদলে যেতে পারে।’

রবিবার বিশ্বকাপের ফাইনাল।

সূত্র-বিবিসি বাংলা