বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে শ্রীলঙ্কাকে হারাল পাকিস্তান।

ওয়ানডে বিশ্বকাপে ১৩ আসরের ইতিহাসে এখন এটিই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। একই সঙ্গে হায়দরাবাদের রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামেরও রেকর্ডটি দখলে নিয়েছে বাবর আজমের দল। এর আগে এ মাঠে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ২৪৯ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার।

বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাবর আজমের দলের জয় ৬ উইকেটে। হায়দরাবাদে মঙ্গলবার ৩৪৫ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে যায় তারা ১০ বল হাতে রেখে।বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয়ের রেকর্ড এটিই। ২০১১ আসরে বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় আয়ারল্যান্ডের জয় ছিল আগের রেকর্ড।

ফাখার জামানের জায়গায় সুযোগ পেয়ে প্রথম পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপ অভিষেকে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন শফিক। ১০৩ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৩ রানের ইনিংস খেলেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।

১২১ বলে ১৩১ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলের জয় নিয়ে ফেরেন রিজওয়ান। ৮ চার ও ৩ ছক্কায় গড়া ইনিংসের জন্য ম্যাচের সেরাও এই কিপার-ব্যাটসম্যান।

এই প্রথম বিশ্বকাপের এক ম্যাচে শতকের দেখা পেলেন পাকিস্তানের দুজন ব্যাটসম্যান।

দুটি সেঞ্চুরি আছে শ্রীলঙ্কার ইনিংসেও। বিশ্বকাপে এক ম্যাচে চার জনের সেঞ্চুরির ঘটনাও এটিই প্রথম। ওয়ানডে ইতিহাসে এই নজির আছে আর কেবল দুটি- ১৯৯৮ সালে লাহোরে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ও ২০১৩ সালে নাগপুরে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে।

আসরে প্রথম দুই ম্যাচেই জিতল পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কা হারের তেতো স্বাদ পেল দুই ম্যাচেই।

কুসাল মেন্ডিসের ৭৭ বলে ১২২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস কিংবা সাদিরা সামারাউইক্রামার ৮৯ বলে ১০৮ রান, কাজে এলো না কিছুই। বিবর্ণ বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে হেরে গেল তারা।

রান তাড়ায় শুরুটা ভালো ছিল না পাকিস্তানের। চতুর্থ ওভারে তারা হারায় ইমাম-উল-হাককে। অষ্টম ওভারে লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন অধিনায়ক বাবরও।সেখান থেকে দারুণ এক জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন শাফিক ও রিজওয়ান। মাত্র আটটি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে নামা শাফিক সেঞ্চুরি করেন ৯৭ বলে। এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি।

শাফিক ও রিজওয়ানের জুটিতে আসে ১৭৬ রান, বিশ্বকাপে যেকোনো উইকেটে পাকিস্তানের এর চেয়ে বড় জুটি আছে আর একটি। ১৯৯৯ আসরে ম্যানচেস্টারে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে সাঈদ আনোয়ার ও ওয়াজাহাতুল্লাহ ওয়াস্তির ১৯৪।

শতকের আগেই পায়ে ক্র্যাম্প করে রিজওয়ানের। বেশ কয়েকবার ফিজিওর সেবাশুশ্রূষাও নিতে হয় তাকে। তবু চালিয়ে যান লড়াই। তৃতীয় ওয়ানডে শতকে পা রাখেন তিনি ৯৭ বলে।মাঝে ৩০ বলে ৩১ রান করে ফেরেন সাউদ শাকিল। ইফতিখার আহমেদকে নিয়ে বাকিটা সারেন রিজওয়ান।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারে কুসাল পেরেরাকে হারায় শ্রীলঙ্কা। তিনে নামা মেন্ডিসকে ১৮ রানে ফেরানোর সুযোগ এলেও ক্যাচ ফেলেন ইমাম।

জীবন পেয়ে পাথুম নিসানকার সঙ্গে ১০২ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন মেন্ডিস। ফিফটি করার পরপরই বিদায় নেন নিসানকা (৫১)।মেন্ডিস সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন স্রেফ ৬৫ বলে, বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার হয়ে যা দ্রুততম। ২০১৫ আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কুমার সাঙ্গাকারার ৭০ বলে সেঞ্চুরি ছিল আগের রেকর্ড।

তার বিধ্বংসী ইনিংস থামান হাসান আলি। তৃতীয় উইকেটে সামারাউইক্রমার সঙ্গে তার জুটিতে আসে ইনিংসের সর্বোচ্চ ১১১ রান।

চারিথ আসালাঙ্কা, দাসুন শানাকা, ধানাঞ্জয়া ডি সিলভারা প্রত্যাশানুযায়ী ব্যাটিং করতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার স্কোর সাড়ে তিনশর কাছাকাছি যায় মূলত সামারাউইক্রমার ব্যাটে চড়ে। বিশ্বকাপে স্রেফ দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা এই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেন ৮২ বলে।

শেষ ১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে কেবল ৬১ রান তুলতে পারে শ্রীলঙ্কা।

৭১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সফলতম বোলার হাসান। পরে দুর্দান্ত রান তাড়ায় সব আলো কেড়ে নিলেন শাফিক ও রিজওয়ান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩৪৪/৯ (নিসানকা ৫১, পেরেরা ০, মেন্ডিস ১২২, সামারাউইক্রমা ১০৮, আসালাঙ্কা ১, ধানাঞ্জয়া ২৫, শানাকা ১২, ওয়েলালাগে ১০, থিকশানা ০, পাথিরানা ১*; আফ্রিদি ৯-০-৬৬-১, হাসান ১০-০-৭১-১৪, নাওয়াজ ৯-০-৬২-১, রউফ ১০-০-৬৪-২, শাদাব ৮-০-৫৫-১, ইফতিখার ৪-০-২২-০)

পাকিস্তান: ৪৮.২ ওভারে ৩৪৫/৪ (শাফিক ১১৩, ইমাম ১২, বাবর ১০, রিজওয়ান ১৩১*, হাকিল ৩১, ইফতিখার ২২*, থিকশানা ১০-০-৫৯-১, মাদুশানকা ৯.২-০-৬০-২, শানাকা ৫-০-৬০-২, পাথিরানা ৯-০-৯০-১, ওয়েলালাগে ১০-০-৬২-০, ধানাঞ্জয়া ৪-০-৩৬-০, আসালাঙ্কা ১-০-১০-০)  

ফল: পাকিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ রিজওয়ান

সুত্র-বিড নিউজ ২৪.কম