বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, মন্দার ‘খুব কাছাকাছি’ রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। কেন না বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সুদের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা উন্নয়নশীল বিশ্বকে জর্জরিত করছে।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য আমরা ২০২৩ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছি, এটি ভয়াবহভাবে বিশ্ব মন্দার কাছাকাছি।’বৃহস্পতিবার আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকের সময় এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যালপাস এসব কথা বলেন।

তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণ বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘মানুষ যে সব সমস্যাগুলো প্রকাশ করেছে যেমন- মুদ্রাস্ফীতি সমস্যা, সুদের হার বৃদ্ধি এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে মূলধন প্রবাহের পরিমাণ হ্রাস দরিদ্র দেশগুলোকে চাপে ফেলেছে।

ম্যালপাস বলেন, ‘নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে একটি বিশ্ব মন্দা ঘটতে পারে।’

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছিল যে সারা বিশ্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো একযোগে মুদ্রাস্ফীতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে সুদের হার বাড়িয়েছে, এর ফলে বিশ্ব ২০২৩ সালে বৈশ্বিক মন্দার দিকে অগ্রসর হতে পারে। বিশ্বব্যাংক এ সময়ে প্রবৃদ্ধি শুধুমাত্র ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিনহুয়ার করা এক প্রশ্নের জবাবে ম্যালপাস বলেছেন, বিশ্বে প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ১ শতাংশ ধরা হয়েছে। ‘সুতরাং যদি বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় অনেক ধীর গতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়, তার মানে মানুষ পিছিয়ে পড়ছে।’

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ম্যালপাস বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য-হ্রাস প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় আঘাত হেনেছে। এই মহামারী ২০২০ সালে প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষকে চরম দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ এ পরিস্থিতি আরো খারাপ করার ঝুঁকিতে ফেলেছে।

বৈশ্বিক দারিদ্র্য ও সমৃদ্ধির প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী গড় আয় ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ১৯৯০ সালে গড় আয়ের পরিমাপ শুরু হওয়ার পর এটি প্রথম পতন।

ম্যালপাস বলেন, ‘সুতরাং এখন যদি বিশ্ব মন্দা আসে, তবে এটি গড় আয়কেও হ্রাস করবে।’

বিশ্বব্যাংক প্রধান আরো উল্লেখ করেছেন যে তিনি উন্নত দেশগুলোতে পুঁজির ঘনত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ম্যালপাস বলেন, ‘সুতরাং আমি মনে করি, নতুন ব্যবসায় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পুঁজি প্রবাহের অনুমতি দেয়ার জন্য বিশ্বকে যে সমস্যাগুলোর সাথে মোকাবেলা করতে হবে এটি তার মধ্যে একটি, যা উন্নত অর্থনীতিতে রাজস্ব ও আর্থিক নীতির দিক পরিবর্তন করবে।’

তিনি বলেন, উন্নত অর্থনীতির কারণে বিশ্ব অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছে। এর মারাত্মক প্রভাব রয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো বিপদে পড়েছে। ‘আমার গভীর উদ্বেগ হলো যে এই পরিস্থিতি ও প্রবণতা ২০২৩-২০২৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।’

সূত্র-নয়া দিগন্ত