ওপেক প্লাস জ্বালানি তেলের উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে শাস্তি দিতে দেশ দুটি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে মার্কিন কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপন হয়েছে।ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট দলের কংগ্রেসম্যান সিম কাস্টেন, টম ম্যালিনভস্কি ও সুসান ওয়াইল্ড এ বিল উত্থাপন করেন বলে রবিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

খবরে বলা হয়, এক বিবৃতিতে এই তিন আইনপ্রণেতা বলেছেন, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত যদি পুতিনকে সাহায্য করে তাহলে তার কাছেই তাদের নিরাপত্তা চাওয়া উচিত।

রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম রাশিয়া টুডের (আরটি) প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন ডেমোক্র্যাট যুক্তি দিয়েছেন যে ওপেক প্লাসের তেলের উৎপাদন কমিয়ে দাম বৃদ্ধির কৌশল হলো রাশিয়ার তেল রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য। তারা উপসাগরীয় দেশগুলোকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলে ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরাজয়’ ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার জন্য "বৃহত্তর সদিচ্ছা" দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

গত বুধবার তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক প্লাস আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিদিন উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল আমেরিকা। কিন্তু সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশগুলো আমেরিকার চাপ উপেক্ষা করে তেলের উৎপাদন কমানোর পক্ষে মত দিয়েছে। এই কারণে আমেরিকা এখন দেশ দুটিকে শাস্তি দিতে উদ্যত হয়েছে। মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা বলছেন, পারস্য উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক দেশ দুটি ধীরে ধীরে রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। তাই সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সেনা প্রত্যাহার করে দেশ দুটিকে শাস্তি দিতে চান মার্কিন আইনপ্রণেতারা।

তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফর সত্বেও সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব মারাত্মকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মূলত তারা আমেরিকার সঙ্গে শত্রুতার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে সুস্পষ্টভাবে রাশিয়ার পক্ষ বেছে নিয়েছে।

সম্প্রতি ওপেক যে জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে তা ঠেকানোর জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। কারণ মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তাছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের এই সময়ে রাশিয়ার আয়ও কমাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

বৃহস্পতিবার সৌদির সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন বাইডেন। তবে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে ওয়াশিংটন আরও হস্তক্ষেপ করবে বলেও জানান তিনি।

তবে সৌদির উদ্ধৃতি দিয়ে কোনো গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাজারে আরও তেল চায় তাহলে তাদের উচিত নিজেদের উৎপাদন বাড়ানো।

সৌদিতে প্রায় তিন হাজার ও আরব আমিরাতে দুই হাজার মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছে। সেই সঙ্গে দেশ দুটিতে সর্বাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং "অন্যান্য অস্ত্র সিস্টেম" আমেরিকান কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। রিয়াদ এবং আবুধাবি মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের ঐতিহ্যবাহী প্রধান মিত্র।

এছাড়াও ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট অগাস্ট মাসে সৌদি আরবের কাছে টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স তথা থাড ব্যালিস্টিক মিসাইল ইন্টারসেপ্টর এবং এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম বিক্রির জন্য অনুমোদন করেছে।

সূত্র-ঢাকাটাইমস/