আগামী বছর বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার আভাস দিলো বিশ্ব ব্যাংক। সংস্থাটি জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়তে গিয়ে দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যেভাবে সুদের হার বাড়াচ্ছে তাতে এই বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। এ নিয়ে নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। এতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো একই সময়ে সুদের হার বৃদ্ধি করায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় তিন অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রবৃদ্ধির গতি অনেকটা স্লথ হয়ে এসেছে। আগামী বছর নাগাদ এটি মন্দায় রূপ নিতে পারে। 


ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ১৯৭০ সালের পর এবারই প্রথম বিশ্ব প্রবৃদ্ধির চাকা এত দ্রুত গতি হারিয়েছে।  যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতির চাকা সবচেয়ে বেশি স্লথ হয়েছে। এর আগের মন্দার আগে ভোক্তারা যেভাবে বাজারের ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছিলেন, এবার তার চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাজারে। আবার দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যেভাবে একসঙ্গে সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে, শুধু সেই চেষ্টায় হয়তো মূল্যস্ফীতির হারকে মহামারির আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। 

এ বছর বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো একইসঙ্গে যে মাত্রায় সুদের হার বাড়িয়েছে, গত পাঁচ দশকে তা দেখা যায়নি। এই প্রবণতা আগামী বছর পর্যন্ত চলতে পারে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মুদ্রানীতিতে সুদের হার প্রায় ৪ শতাংশে উন্নীত করবে, যা ২০২১ সালের গড় তুলনায় ২ শতাংশ পয়েন্টের বেশি।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত কমে যাচ্ছে।

বিভিন্ন দেশ মন্দায় পড়ার কারণে তা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। আমার উদ্বেগ হল, এই প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। এর দীর্ঘস্থায়ী ফল উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির মানুষের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে। মূল্যস্ফীতির নিম্ন হার, মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য নীতিনির্ধারকদের ব্যয় কমানো থেকে উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এজন্য অতিরিক্ত বিনিয়োগ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মূলধন বরাদ্দের কৌশল নির্ধারণ করা উচিত, যা প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর পাশাপাশি দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

রিপোর্টে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মোকাবিলায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া শ্রম-বাজারের সীমাবদ্ধতা কমানো, বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি, খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহে বৈশ্বিক সমন্বয় এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। এর আগে আইএমএফও অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বের দেশগুলোকে সতর্ক করেছিল।